অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: সেনাপ্রধান


বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনকালে একথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উৎসব উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে।

এরই অংশ হিসেবে উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব জেলায় সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি সহযোগিতা ও সম্প্রীতির মনোভাব নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনে ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

ওদিকে দুর্গাপূজা উদযাপনে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে গত বুধবার একটি নির্দেশনা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে।

জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তারা এ ধরনের কমিটি গঠন করবেন।

উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপি মোতায়েন থাকবে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা

বিগত কয়েকদিনে কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পাবনা ও ফরিদপুরে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজা উদযাপন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে৷

এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ভয়, আতঙ্ক ও মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ভয়েস অফ আমেরিকাকে “দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুর হচ্ছে” উল্লেখ করে বলেন, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তো একটা ট্রমার মধ্যে আছে। তারা পূজা করতেও চায়, আবার করতে গেলে হামলার আশঙ্কা মধ্যেও আছে। এখন তারা দোটানায় মধ্যে আছে।”

“এবার পূজা কতটা উৎসবমুখর হবে কিনা বলতে পারবো না। তবে, পূজাকে করে ভয় এবং আতঙ্কে আছে সংখ্যালঘুরা” বলে যোগ করেন রানা দাশগুপ্ত।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা প্রস্তুতির ঘোষণা এসেছে সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর আর মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পটভূমিতে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) জানিয়েছে, ৪ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

তাদের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে ৯ জনকে হত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ/গণধর্ষণ, ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ; ৯১৫টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; ৯৫৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; বসতবাড়ি দখল একটি; ৩৮টি শারীরিক নির্যাতন এবং ২১টি জমি/ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।

২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ার সেনেটর বেন কার্ডিন এবং সদস্য সেনেটর ক্রিস মারফি, সেনেটর ভ্যান হলেন ও সেনেটর জেফ মার্কলি যৌথভাবে এক চিঠিতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া ও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

২৬ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার বৈঠকে দুই নেতা দু'দেশের অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ ছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যসহ বাংলাদেশের সকলের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

এবছর বাংলাদেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি স্থানে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

XS
SM
MD
LG