ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার কার্যালয়ের সামনে রবিবার (২৪ নভেম্বর) একদল বিক্ষোভকারী অবস্থান নেয় এবং পরে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ ঘটনা ঘটে বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার।
মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, “বিক্ষোভকারীরা বিকাল থেকে প্রথম আলো কার্যালয়ে সামনে সংঘটিত হতে থাকে। আমরা শুরুতে তাদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করি। কিন্তু তারা সরে না গিয়ে উল্টো পুলিশকে আক্রমণ করে ও ভেতরে প্রবেশ করতে চায়। সন্ধ্যার দিকে তাদেরকে সরিয়ে দিতে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ।”
স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে মো. ইসরাইল হাওলাদার ভয়েস অফ আমেরিকাকে আরও বলেন, “এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে এখন পুলিশসহ যৌথ বাহিনী উপস্থিত রয়েছে। যত সময় থাকা লাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে থাকবে।”
বিশৃঙ্খলাকারীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশের তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোবারক হোসেনসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই ঘটনার পর থেকে প্রথম আলোর কর্মকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেউ গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত আছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে প্রথম আলোর কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, “অফিসের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো কথা না বলতে।”
তবে, প্রথম আলো তাদের অনলাইনে নিজের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়- "ররিবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার কিছু আগে ১৫-২০ জনের একটি দল একটি গরু নিয়ে প্রথম আলোর সামনে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। বেলা আড়াইটার দিকে তারা আবার প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে আসার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর তারা কারওয়ান বাজারের ভেতরের প্রধান সড়কে বসে পড়ে এবং সেখানে একটি গরু জবাই করে। সন্ধ্যার দিকে বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা বেড়ে ৫০-৬০ জনে দাঁড়ায়।"
তাদের রিপোর্টে আরও বলা হয়- "সন্ধ্যায় সারা দেশ থেকে কারওয়ান বাজারে সবজিসহ নিত্যপণ্যবাহী গাড়ি আসার সময় হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আরও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। তখন পুরো কারওয়ান বাজারে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের অনেকে দোকান বন্ধ করে দেন। মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজারে প্রবেশের অংশের ফটকও বন্ধ করে দেওয়া হয়।"
এর আগে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২১ ও ২২ নভেম্বর) কারওয়ান বাজার এলাকায় অবস্থিত প্রথম আলো- দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে একদল বিক্ষোভকারী। ‘বাংলাদেশের জনগণ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা ডেইলি স্টার অফিসের সামনে গত শুক্রবার জুমার নামাজও আদায় করেন।
প্রতিষ্ঠান দুইটির সামনে 'ভারতীয় আগ্রাসন'-এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরে ‘জোড়া গরু জবেহ’ কর্মসূচি শুরু পালন করে আসছে বিক্ষোভকারীরা।