ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল সোমবার ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ করছে বলে জানান।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সব হলের প্রভোস্টের সঙ্গে মিটিং করেছি। তাদেরকে বলেছি পুরো রাত হলে থাকার জন্য। দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পসের ভেতরে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ করার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আমার কথা না হলেও উপাচার্যের কথা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে কাজ করে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “আমাদের হাতে তো কোনও বাহিনী নেই। এখন মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলে এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজস্ব কোনও বাহিনী নেই। আমরা শুধু কথা বলতে পারি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তো পুলিশ লাগবেই।”
কোটা আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য যে রাজনৈতিক শক্তি জড়িত আছে বলে দাবি করেন, এই উপ-উপাচার্য।
আন্দোলন সমাধানে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়বে বলেও জানান মুহম্মদ সামাদ।
তিনি আরও বলেন, “এখন আমরা ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী উভয় পক্ষকে বলেছি যারা আমাদের শিক্ষার্থী তাদের হলে অবস্থান করতে। সেখানে কেউ কারো উপর আক্রমণ করতে পারবে না। রাতে হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরা সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে। কিছু হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা সমাধান করতে না পারলে উপাচার্য, উপ- উপাচার্য সহ যে চারজন উর্ধতন কর্মকর্তা আছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।"
হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবেঃ প্রক্টর
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকালীর সঙ্গে ছাত্রলীগের হামলা ও সংর্ঘষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মো.মাকসুদুর রহমান।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই নিয়ে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ দুই পক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। ক্যাম্পাস থেকে বহিরাগতদের বের করে দেওয়ার জন্যই পুলিশকে ডাকা হয়েছিলো।”
সংর্ঘষে আহত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাকসুদুর রহমান বলেন, “কতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখন আমাদের কাছে আসেনি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আহত সকল শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলা, আহত শতাধিক
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও হাসপাতাল সূত্র।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলন কর্মী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
সংঘর্ষ বিকাল ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ স্থায়ী হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠি, স্টাম্প ও লোহার রড দিয়ে আন্দোলনকারীদের আঘাত করতে দেখা গেছে। এসময় অনেকে আহত হন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায় আহত অবস্থায় ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমবেত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দুপুরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে কয়েক জন কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মী সমাবেশে যোগ দিতে বের হন। এ সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা গেটে তালা লাগিয়ে তাদের বাধা দেন। এতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন; সায়মা আফরোজ, শাহিনুর সুমি, সুমাইয়া আক্তার ও সানজিদা হক। আহতদের মধ্যে একজনকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের বিরোধিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে রবিবার (১৪ জুলাই) গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে একটি প্লাটফরমের আহবানে রবিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। বিক্ষোভে ছাত্রীরাও অংশ নেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন: মঙ্গলবার দেশের সব ক্যাম্পাসে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা
বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার প্রতিবাদে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সারা দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন কোটা আন্দোলনের মুখপাত্র ও অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম।
কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে, সারাদেশের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি এবং কর্মসূচি সফল করতে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহবান জানান।