বান্দরবান জেলায় সোনালী ব্যাংকের রুমা উপজেলা শাখার অপহৃত ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনের মুক্তিপণ হিসেবে তাঁর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) কেএনএফের পক্ষ থেকে ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণ পর বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নাজমুন নাহার।
২ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। সেদিন সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে কেএনএফ। তারাবিহর নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। কেএনএফের সদস্যরা ব্যাংকের পাহারারত আনসার সদস্যদের কাছ থেকে ১৪টি অস্ত্র লুট করে এবং ব্যাংক প্রাঙ্গণে মসজিদ থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে।
এ ঘটনার পরদিন বুধবার বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে থানচি উপজেলা শাখায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় কৃষি ব্যাংকের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা শান্তি কমিটির সভাপতি ক্য শৈহ্লা মারমা জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে মুক্তি, লুট হওয়া ১৪টি অস্ত্র ও অর্থ ফেরত দেওয়াসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসার কথা নাকচ করে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্য শৈহ্লা মারমা জানান, কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুবিধার্থে ২০২৩ সালের ২৯ মে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ৩০ জুন স্থানীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১৮ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। পরে জেলায় শান্তি ফেরাতে শান্তি কমিটি ও কেএনএফের মধ্যে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৫ মার্চ এই গ্রুপের সঙ্গে কয়েকটি ব্যক্তিগত আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয় এবং কেএনএফ সমস্ত সশস্ত্র কার্যক্রম স্থগিত করার আশ্বাস দিয়েছিল।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)
বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ২০২২ সালের এপ্রিলে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে। কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অন্তত ছয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে তারা। এ সময় তারা ফেসবুকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলাগুলোর সমন্বয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি করে।
এদিকে কেএনএফ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।