নির্বাচন বর্জন করে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারাই দিশেহারা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ দিশেহারা’, বিএনপি নেতা ড. আব্দুল মঈন খানের এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাছান মাহমুদ বলেন, “নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতারাই দিশাহারা হয়ে উদ্ভট আবোল-তাবোল কথা বলা শুরু করেছে। … ভোটে না আসার যে কী যন্ত্রণা, সেটি বিএনপি নেতারা সবাই বুঝতে পারছে।”
উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকবিহীন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “নির্বাচন দলীয় প্রতীকবিহীন ও উন্মুক্ত প্রার্থীতায় হবে। দলীয় প্রতীকবিহীন উপজেলা নির্বাচন এবারই প্রথম নয়। আগে উপজেলা নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকবিহীনই হতো, শুধু গতবারই দলীয় প্রতীকে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনে অবশ্যই অযাচিত হস্তক্ষেপ সমীচীন নয়, মানুষ তাদের পছন্দ মতো ভোট দেবে, আমরা কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছি না।”
‘দেশে আইনের শাসন নেই’, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে হাছান মাহমুদ বলেন, “দেশে আইনের শাসন আছে বলেই তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও আদালতের দেওয়া জামিনে মুক্ত আছেন।”
মঈন খান: বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, “বিএনপি কখনো বলেনি তারা নির্বাচনে যাবে না, বরং আমরা বলেছি বর্তমান সরকারের অধীনে ‘সাজানো, একতরফা, প্রহসন ও প্রতারণামূলক’ নির্বাচনে অংশ নেবে না।”
তিনি বলেন, “এবারের উপজেলা নির্বাচনের সঙ্গে আগের নির্বাচনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হবে না। তাই উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কোনো সম্ভাবনা নেই।”
বুধবার (৩ এপ্রিল) সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের উত্তরার বাসায় যান তিনি। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মঈন খান বলেন, “উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না রাখার সিদ্ধান্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ নিজেই স্বীকার করে যে, দেশের জনগণ নৌকা প্রতীককে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই নৌকা ডুবিয়েছে।”
মঈন খান বলেন, “আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে জিতে একাধিকবার সরকার গঠন করেছে। আমরা জনগণকে শাসন করায় বিশ্বাস করি না, তাদের সেবা করার জন্য রাজনীতি করি।”
তিনি বলেন, জনগণকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে কী দেবে না, সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
বিএনপির আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, “বিএনপির সংগ্রামের ফল না পেলে ৯৫ শতাংশ মানুষ ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জন করল কেন?”
আওয়ামী লীগ রাজনীতি করছে ক্ষমতায় থাকার জন্য আর বিএনপি রাজনীতি করছে মানুষের সেবা করার জন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল করেছে, বিএনপি কখনো তা চিন্তাও করে না।”
বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে মঈন খান আরও বলেন, তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার জন্য দেশের জনগণকে অনুরোধ করেছিলেন এবং তারা (জনগণ) প্রহসন, সাজানো ও একতরফা ডামি নির্বাচন বর্জন করে তা বাস্তবায়ন করেছে।”
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কারও বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার নজির পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। “আমরা অল্প কিছু স্বৈরাচারী দেশকে চিনি, যেখানে বিরোধী দলের দমন বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ নয়।”
উপজেলা নির্বাচন
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চার ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ১৫ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ ৮ মে।
এরপর ১ এপ্রিল (সোমবার) দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ২১ মে।
তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি।