অবৈধ মজুত করে কেউ যদি বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তাহলে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের (২০২৪) তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিবেশন শেষে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
একজন সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, বাজার ব্যবস্থায় যদি কেউ অস্থিতিশীল বা মজুদ করে তাহলে তাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সে বিষয়ে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না?
এই প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ রকম কাজ করলে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বার বার অগ্নিকাণ্ড ঘটার প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তদন্ত শেষ হয়ে যদি আদালতের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন আসে এবং সেখানে যদি মামলা শুরু করা হয়, এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদের প্রসিকিউশনকে যে নির্দেশনা দেওয়া দরকার সেটি দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, ডিসিরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেছেন এবং আমাদের আইনসচিব সেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
মামলা জট নিরসনের জন্য ডিসিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আনিসুল হক আরও বলেন, যেসব মাল জব্দ করা হয়, সেসব মাল নিষ্পত্তির বিষয়ে কী করা উচিত এবং আধুনিকায়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে। আমরা ই-জুডিশিয়ালের কথা বলেছি। সেখানে কতটুকু সুবিধা হবে সে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, “আমি আমার বক্তব্যের প্রথমে ডিসিদের কাছে মামলা জটের বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছি। মামলা জট নিরসনের জন্য তারা যেন সহযোগিতা করেন।”
তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের বিরুদ্ধে একটা মামলা আছে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা ত্বরিত পদক্ষেপ নেব এবং একটা বিষয়ে স্পষ্টকরণ করা হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, অনেক সময় হাইকোর্ট বিভাগে কেউ যদি মামলা করে তখন হাইকোর্ট আবেদন নিষ্পত্তির জন্য একটা আদেশ দেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় জটিলতা দেখা দেয়, যে হাইকোর্টের আদেশ না বুঝে অনেক দেরি করা হয়। সে বিষয়ে স্পষ্টকরণ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং আমি বলেছি, আবেদনটি ডিসপোজ করা বা সম্ভব হলে গ্রহণ করা। আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে একটা জবাব দিয়ে এ ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করে দেওয়া। সে বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু ছিল না।
আনিসুল হক আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলার বিষয়ে আমি নিজেই তুলেছিলাম এবং বলেছি আমরা একটা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সুষ্ঠু নিষ্পত্তি চাই।
বিশেষ ক্ষমতা আইন
রহুল আলোচিত বিশেষ ক্ষমতা আইন পাস হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। এই আইন অনুযায়ী নির্বাহী কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য যে কাউকে আটক করতে পারে।
১৯৭৪ সালে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এই আইন পাসের পর আওয়ামী লীগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচকেরা এই আইনটিকে 'কালো আইন' বলেও অভিহিত করেন।
যেসব কারণে আইনটির সমালোচনা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আইনটির অধীনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহভাজন যে কাউকে আটক করার ক্ষমতা পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল।
পরবর্তীতে আইনটির কিছু কিছু সংশোধন করা হয় বা অতিরিক্ত ব্যবস্থাদি বিশেষ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয় সংযোজন করা হয়। ১৯৯১ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটির ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা রদ করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা হয়।
আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় গেলে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর তারা আর সেটি বাতিল করেনি।