বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার দুটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া, ফায়ার লাইসেন্স না নেওয়ায় এবং ফায়ার লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভবন দুটির একটি জিগাতলায় সাতমসজিদ সড়কের পাশে কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজা এবং অপরটি সাতমসজিদ রোডের রূপায়ন জেড আর প্লাজা।
সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে এই ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানকালে কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। কিন্তু ওই ভবনে থাকা ‘ভিসা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্বলতা পাওয়ায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রূপায়ন জেড আর প্লাজার ভেতরে বুফে লাউঞ্জ ও বুফে প্যারাডাইস রেস্টুরেন্টকে লাইসেন্সের শর্ত না মানায় এবং অগ্নিনির্বাপণের লাইসেন্স না পাওয়ায় একই ভবনের ভেতরে থাকা বুফে এম্পায়ার রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া, অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩ অনুযায়ী যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় ভবন দুটিকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' ঘোষণা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে ভবন দুটিতে 'ঝুঁকিপূর্ণ' ব্যানার লাগানো হয়। ভবন দুটির অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট, শোরুম ও অফিস খালি পড়ে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি সাততলা ভবনে আগুনের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই ভবনের প্রত্যেক তলায় রেস্তোরাঁ ছিল। এ ঘটনার পর ঢাকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনে ইচ্ছেমতো রেস্তোরাঁ তৈরি নিয়ে উদ্বেগ জানান বিশেষজ্ঞরা। বাণিজ্যক ভবনে অভিযান চালিয়ে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখারও দাবি জানানো হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার একযোগে অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর আগে রবিবার ঢাকার গুলশান, মিরপুর ও উত্তরায় প্রায় ৫০টির মতো রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
বেইলি রোডে ভবনে অগ্নিকাণ্ড
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভবনের ‘কাচ্চি ভাই’ নামে রেস্তোরাঁয় রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং তা দ্রুত ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকার বিভিন্ন স্টেশন থেকে আটটি ইউনিট সেখানে পৌঁছায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে আরও চারটি অগ্নিনির্বাপক ইউনিটকে যুক্ত করা হয়।
পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেন। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা একযোগে কাজ করে রাত ১২টার একটু আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন পরে বলেছিলেন, ওই ভবনে একটাই দোকান ছিল এবং বাকি সব কটা ছিল রেস্টুরেন্ট। ভবনের চারদিকে গ্যাসের সিলিন্ডার ছড়ানো ছিটানো ছিল। ওইগুলোর একটি কিংবা গ্যাসের চূলায় বিস্ফোরণের কারণে আগুন ধরতে পারে।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে রয়েছে।
রবিবার তাদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১৪ জনের মধ্যে বাসায় ফিরেছেন ১১ জন। এখনো ভর্তি আছেন তিনজন। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও দুজন।