দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যেরা শপথ নিয়েছেন।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের শপথকক্ষে তাঁদের শপথ পাঠ করান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ৫০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
নির্বাচিতদের মধ্যে ৪৭ জন আওয়ামী লীগের, একজন ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির এবং বাকি দুজন জাতীয় পার্টির।
স্পিকার প্রথমে আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে নির্বাচিতদের শপথ পড়ান। এরপর জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত দুজনকে আলাদাভাবে শপথ পড়ানো হয়। শপথ গ্রহণ শেষে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যেরা রীতি অনুযায়ী শপথ বইয়ে সই করেন।
১৪ মার্চ নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনে নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ছিল। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটের প্রয়োজন হয়নি। সরাসরি নির্বাচনে দল বা জোটগুলোর পাওয়া আসনের সংখ্যানুপাতিক হারে নারী আসন বণ্টন করা হয়।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
উল্লেখ্য, এ বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ১১ জন এবং জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি থেকে জয়ী হয়েছেন ১ জন করে।
জাতীয় পার্টির ১১ জনই জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে। জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন নৌকা নিয়ে লড়ে। আর কল্যাণ পার্টিও তার আসনটি জিতেছে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে।
এ ছাড়া, বিজয়ী ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা।
ফলে এ নির্বাচন শেষে বাংলাদেশে একটি একদলীয় ‘গণতন্ত্রের’ উত্থান হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)সহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের বর্জন করা এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া দেয়া তথ্য মতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। ভোটার উপস্থিতির সরকারি এই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশে বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের পর এটিই বাংলাদেশে হওয়া সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। যদিও বিএনপিসহ, দেশি বিদেশি অনেকেই এই নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ বলে দাবি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে ও জাতিসংঘ পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী-লীগ সর্বোচ্চসংখ্যক আসন নিয়ে জয়ী হয়েছে।
বাংলাদেশের এই নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এছাড়া বিবৃতিতে নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করা হয়।
যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) বা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।”
বিবৃতিতে নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের হাতে ভোট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিকল্প ছিল না বলে মতামত দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানান।
বিবৃতিতে তিনি নবনির্বাচিত সরকারকে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান।