ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সব ঠিক থাকলে আগামী বছর ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সাত বা আটটি দফায় ভোট গ্রহণ হতে পারে।
সাধারণত, ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার ৩০ দিন থেকে ৪৫ দিন আগে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন মু্খ্য নির্বাচন কমিশনার। এবারও ২০২৪-এর মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগেই সারা দেশে সমস্ত বোর্ডের পরীক্ষা শেষ করে ফেলার কথা। পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে যাবে ফেব্রুয়ারি মাসে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাবে।
সিবিএসই-ও জানিয়ে দিয়েছে তাদের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য বোর্ডের পরীক্ষা ২ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়েছে, পরীক্ষা চলাকালীন লাউড স্পিকার বাজানো যাবে না। আবার প্রথম দফার ভোট গ্রহণের আগে প্রার্থীদের ও রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচারের সুযোগও দিতে হবে। তাই এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে ভোট গ্রহণ শুরু করা সম্ভব নয়।
সেক্ষেত্রে মার্চ মাসের ১০-১২ তারিখ নাগাদ ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হতে পারে।
ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোট নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আপডেটেড ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০২৪-এর জানুয়ারি মাসে। তার ভিত্তিতেই হবে ভোট গ্রহণ।
আগামী লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের সরকারও প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন ২২ ডিসেম্বর শেষ হবে। তার পর জানুয়ারি মাসের শেষে ফের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে।
এবার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করতে পারবে না নরেন্দ্র মোদী সরকার। আগামী জুলাই পর্যন্ত সরকারের কাজকর্ম চালাতে অর্থ সংস্থানের জন্য ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করা হবে। তবে ভোট অন অ্যাকাউন্টের সময়েও প্রতিশ্রুতি ঘোষণার রীতি রয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন গত সপ্তাহে সংসদে অতিরিক্ত বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন। প্রতি বছরই কেন্দ্র সরকার বছর শেষে এই সময় সাপ্লিমেন্টারি বাজেট পেশ করে কিছু কিছু মন্ত্রকের জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করে।
অর্থমন্ত্রীর পেশ করা অতিরিক্ত বাজেট প্রস্তাবে এ বছর দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভোটের খরচ বাবদ ৩,১৪৭ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এর অর্থ, জাতীয় নির্বাচন কমিশন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রায় আট হাজার কোটি রুপি খরচ করতে চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ভারতীয় মুদ্রায় আরও ৭৩ কোটি রুপি। এই অর্থ খরচ হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কাজকর্ম বাবদ।
অতিরিক্ত বরাদ্দ অর্থ খরচ হবে মূলত নতুন ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেশিন কিনতে। কমিশন ছয় মাস আগেই ভারত ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন নামক সংস্থাকে এই দুটি মেশিনের বরাত দিয়ে রেখেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু কমিশনের হাত দিয়েই খরচ হবেপাঁচ হাজার কোটি রুপি। এছাড়া নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কাজের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে।
প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনেই তার আগের ভোটের চাইতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে কমিশনের বাজেট ছিল এক হাজার ১৬ কোটি রুপি। তার পাঁচ বছর পরে ২০০৯-এ যা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল এক হাজার ১১৪ কোটি রুপি। কারণ সেই বছর ইভিএম কিনতে বড় কোনও ব্যয় করতে হয়নি।
এর পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৩৮৭০ কোটি রুপি ব্যয় হয়। শেষ লোকসভা নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৯-এ তা বেড়ে হয় পাঁচ হাজার কোটি। এই অঙ্কই এই বছরেও বাজেটে ধরা ছিল। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হবে অতিরিক্ত বরাদ্দ। এর প্রধান কারণ ২০২৩-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট মেশিন কেনা হচ্ছে ।