ভারতে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন শেষে চার রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তীশগড়ে জিতেছে বিজেপি, তেলেঙ্গানায় জয় পেয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের হাতে থাকা রাজস্থান ও ছত্তীসগড় হাতছাড়া হয়েছে। মধ্য কংগ্রেস প্রদেশেও ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ। তেলঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস।
আগামী বছর ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে এই রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিজেপি বিরোধী দলগুলির জোট ইন্ডিয়া-কে সমস্যায় ফেলতে পারে। ভারতে হিন্দি বলয় নামে পরিচিত অংশের অন্যতম প্রধান এই তিন রাজ্য লোকসভা ভোটের আগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে।
ইন্ডিয়া জোটের অধিকাংশ শরিক দলের বক্তব্য, কংগ্রেস একা লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জোটের ফলাফল ভালো হয়নি।
তবে কোনও শরিক দলই এই ফলাফলকে ইন্ডিয়া জোটের হার বলে মনে করছে না। আপাতত, জোট অটুট রাখার ব্যাপারে সব শরিকই একমত।
কংগ্রেস রবিবার ৩ ডিসেম্বর ভোটের ফল ঘোষণার পর কুড়ি বছর আগের ফল তুলে ধরেছে। ২০০৩-এ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগড় বিধানসভায় জয়ী হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০০৪- এর লোকসভা ভোটে ওই তিন রাজ্যে ভাল ফল করার পাশাপাশি কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এই পুরনো তথ্য তুলে ধরে রবিবার এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ পোস্ট দেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ।
রবিবার ফল প্রকাশের পরই তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেয়, চার রাজ্যের ভোটের ফলকে তারা ইন্ডিয়া জোটের ব্যর্থতা বলে মানে না। জোট অটুট রাখার পক্ষেই পদক্ষেপ করবে দল। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করেননি।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে মতপ্রকাশ করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ও জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। এই দুই নেতার দলই মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে প্রার্থী দিয়েছিল। দুই দলেরই বক্তব্য, কংগ্রেসের কারণেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়নি।
অখিলেশ যাদব ভোটের আগে দুই রাজ্যেই প্রচার করেন। বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও আক্রমণ করেন তিনি। মধ্য প্রদেশে ছ'টি আসন দাবি করেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং সেই প্রস্তাবে সায় দেওয়ার পরও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ তা খারিজ করে দেন। ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে সমাজবাদী পার্টি ভোট কাটায় ছ'টি আসন হারিয়েছে কংগ্রেস।
নীতীশ কুমার ও অখিলেশ যাদবের বক্তব্য, বিধানসভার ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভার আসন সমঝোতায় উদার হতে হবে কংগ্রেস শিবিরকে।
কংগ্রেসের মনোভাবের কারণেই হিন্দি বলয়ে বিপর্যয় বলে মনে করেছে আরও দুই শরিক দল, দুই বাম দল সিপিএম ও সিপিআই। এই দুই দলের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে ডি রাজা এবং সীতারাম ইয়েচুরি কংগ্রেসকে সতর্ক করে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মধ্যে আরও বোঝাপড়া দরকার। একা লড়াই করার মনোভাব ছাড়তে হবে কংগ্রেসকে।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়ায় রাজস্থানে সিপিএম তাদের হাতে থাকা দুটি আসন হারিয়েছে। এই রাজ্যেও বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেল দল। বস্তুত
সামগ্রিকভাবে চার রাজ্যে নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর, কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে শিবসেনা। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের সঙ্গে লোকসভার নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস লোকসভা ভোটে অবশ্যই ভাল ফল করবে।
আগামী বুধবার ৬ ডিসেম্বর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই শরিক দলগুলি নিজেদের মতামত তুলে ধরবে।