২৯ অক্টোবর (রবিবার) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে শায়রুল কবির খান জানান, "আজ ২৯ অক্টোবর সকাল ৯ টা ২০ মিনিট গুলশান ১৮ বাসা ৭১ নম্বর রোড থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যার-কে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি অসুস্থ, এই পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।"
এটা হচ্ছে চলমান দমন নীতির অংশঃ রুহুল কবির রিজভী আহমেদ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আটকের প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "এটা হচ্ছে চলমান দমন নীতির অংশ। তিনি দলের শীর্ষ নেতা ও মহসচিব। এইভাবে কয়েক ঘন্টা তার বাসায় নাটক করে তারপর তাকে আটক করে তুলে নিয়ে যাওয়া, আবার তাকে জিজ্ঞাবাসা করা হবে বলছেন, এটা সম্পূর্ণরূপে মানসিক নিপীড়ন করা। সামগ্রকিভাবে তিনি একজন বয়স্ক মানুষ। ৭৫ বয়সী একজন মানুষকে এইভাবে তুলে নিয়ে আটক করা, এটা চলমান দমন-নীপিড়নের অংশ।"
বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, "পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। তারপর জানাবো। এই সমস্ত অন্যায়, গ্রেফতার, নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ, হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে আহত করা এবং গতকাল সমাবেশ স্থল থেকে হাজারও নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে এই যে সামগ্রকি ভংয়কর চিত্র, তার বিরুদ্ধে আমরা আবারও নতুন কর্মসূচিতে যাবো।"
বিএনপির মহাসচিবকে গ্রেফতারের কারণে চলমান আন্দোলনে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, "না, চলমান আন্দোলনে প্রভাব পড়বে না। বরং নেতাকর্মীরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে। রাজপথে জনগণের আরও উপস্থিতি বাড়বে গণতন্ত্রের পক্ষে।"
দলের মহাসচিবকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "মহাসচিবকে বাসা থেকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে সবাই চেনেন, তিনি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কখনো জড়িত না। এমনকি সহায়তাও করেন না। স্বরাষ্টমন্ত্রীর কথায় বুঝলাম, তাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য আসামি করা হয়েছে। তারা পুরো ব্যাপারটিকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখাচ্ছে তারা।"
বিএনপি এই সিনিয়র নেতা বলেন, "এটা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে যা দেখলাম এসব ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়ে দোষ দেয় আমাদের ওপর। এবারও সেরকমই হচ্ছে। কাজেই সরকার আন্দোলনকে ব্যার্থ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।"
দলের মহাসচিবের গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে আন্দোলনে কেনো প্রভাব পড়বে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "প্রভাব তো পড়বেই না বা বরং আন্দোলন আরও জোরদার হবে। এটা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে জানার পরেও, বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার করে আন্দোলনকে বন্ধ করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এগুলো করে আন্দোলন কখনো রুদ্ধ করা যায় না বরং আরও তীব্রতর হয়।"
সহিংসতার দায় বিএনপির নেতারা এড়াতে পারবেন না: আসাদুজ্জামান খান কামাল
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার দায় বিএনপির নেতারা এড়াতে পারবেন না। রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। আসাদুজ্জামান খান বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা হবে।
বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন সহিংসতা চলছিল তখন দলের সিনিয়র নেতারা মিটিং করছিলেন। তাদের ডিএমপি কমিশনার বার বার জিজ্ঞেস করছিলেন, তাদের মহাসমাবেশের সীমানা কতদূর হবে। তারা জনিয়েছিলেন, নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত।
তিনি প্রশ্ন করেন, "যে সহিংসতা হয়েছে সেটির দায় কি বিএনপি নেতারা এড়াতে পারবেন?"
শনিবারের সংঘর্ষ, ভাঙচুরের পর বিএনপির সমাবেশ স্থগিত, রবিবার হরতাল আহবান
সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল আহবান করেছে বিএনপি।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ স্থগিত করে, এই হরতালের ঘোষণা দেন। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার দুপুরে হ্যান্ডমাইকে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছেন আদিত্য রিমন।)