অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে- জাতিসংঘ ভাষণে শেখ হাসিনা


জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে উন্নত দেশগুলোকে তাদের ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানান। এটা ছিল তার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ১৯তম ভাষণ।

ভাষণে বাংলাদেশে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।...জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা বিবেচনা করতে হবে। আমরা ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তহবিলের জরুরি বাস্তবায়ন চাই।"

বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে, বিগত বছরের মতো এবারো তিনি বাংলায় ভাষণ দিলেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে ইউএনজিএ-তে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের সেই ভাষণের একটি বিশেষ উক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বৈশ্বিক সংহতি রক্ষার্থে আস্থার পুনঃনির্মাণ এবং পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা আগামি বছর অনুষ্ঠিতব্য "সামিট অফ দ্য ফিউচার" উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, "আশা করছি, এই প্রক্রিয়াটি ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।"

জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও, বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

বাস্তুচূত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন বিষয়ে বিশ্বনেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচূত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাস্তুচূত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। বাস্তুচূত রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষদের তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি।"

ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, "এ বছর ফিলিস্তিনের উপর বিপর্যয় নিয়ে আসা - ‘নাকবা’ এর ৭৫ বছর পূর্ণ হলো। ফিলিস্তিনের জনগনের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে।"

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, "প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।" এবছর থেকে দেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার কথাও বলেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দ্বারা স্বীকৃত এবং প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছি।"

ভাষণে তিনি বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে, "অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সংঘাত-পরবর্তী পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছি। জাতিসংঘের প্রতিরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের কার্যক্রমকে আমরা পুরোপুরি সমর্থন করি।"

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হলো; আস্থা পুনর্গঠন ও বৈশ্বিক সংহতি পুনরুজ্জীবিত করা: সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্বের লক্ষ্যে ২০৩০ এজেন্ডা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ওপর পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করা।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএনজিএ-তে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান।

XS
SM
MD
LG