অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

৩ কলেজের দিনভর সংঘর্ষের পর সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা


যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

যাত্রাবাড়ী এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের পর, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় গণমাধ্যমে, যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার। ১৬ নভেম্বর সকালে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৮ নভেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। অভিজিৎ এইচএসসি-২৪ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ২০ ও ২১ নভেম্বর হাসপাতাল অবরোধ করেন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ এদিন ন্যাশনাল মেডিকেলের পক্ষ নিয়ে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের উপর আক্রমণ করেন।

পরে প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে রবিবার (২৪ নভেম্বর) কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে ভাঙচুর চালান ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।

গতকাল সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও আজ আবারও দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা চালান।

তারা কলেজ ভবন ভাংচুর ও প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, "হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিজিতের ভুল চিকিৎসা করেছে। তারা এর বিচার চাইতে আসেন। কিন্তু ছাত্রদল তাদের ওপর হামলা করে।"

দুপুরে পূর্বঘোষিত 'সুপার সানডে' কর্মসূচির অংশ হিসেবে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে জড়ো হন ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীরা। "ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ" নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সংহতি জানান।

আন্দোলনে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজ, গিয়াসউদ্দিন কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ, ইমপেরিয়াল কলেজ, বোরহানউদ্দিন কলেজ, বিজ্ঞান কলেজ, দনিয়া কলেজ, লালবাগ সরকারি কলেজ, উদয়ন কলেজ, আদমজী, নটরডেম, রাজারবাগ কলেজ, নূর মোহাম্মদ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, গ্রিন লাইন পলিটেকনিক, ঢাকা পলিটেকনিক, মাহবুবুর রহমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা দনিয়া কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ অংশ নেয়।

তবে শিক্ষার্থীরা কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের উপর অভিযোগ করলেও এ ঘটনায় তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন।

তিনি বলেন, "আমরা শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের পক্ষে। আমরা কোনো হামলা করিনি।"

সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, "কাল ওই কলেজের প্রিন্সিপাল ও আমাদের প্রিন্সিপাল একটা সমঝোতায় এসেছিলেন। আমরা আশ্বস্ত ছিলাম এমন কিছু হবে না। কিন্ত তারপরও হামলা হলো। পুরো কলেজে হামলা চালিয়েছে। আমার রুম পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে।"

সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, "আজ পরীক্ষা ছিল। গতকাল রাত পর্যন্ত কলেজের প্রিন্সিপাল সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বললেন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছেন। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বললেন কিছু হবে না। সোয়া ১টার দিকে কিছু বোঝার আগেই সিসিটিভিতে দেখি প্রচুর ছেলেমেয়ে এসেছে। গেট ভেঙে ঢুকেছে। ইচ্ছামতো ভাঙচুর করেছে। গাড়ি ভাঙচুর করেছে। গ্যাস লাইন ছেড়ে দিছে।"

তিনি আরও বলেন, "শিক্ষার্থীদের মার্কশিট, খাতা, ল্যাপটপ কিছুই নেই। আমি ঢাবিতে জানিয়েছে। প্রোভিসি বলেছিলেন অ্যাপ্লিকেশন পাঠাতে। ভাঙচুরের জন্য তাও পাঠাতে পারিনি। এরা কি ছাত্র হতে পারে? এতো নাশকতা তো ছাত্র করতে পারে না।"

এদিকে লালবাগ জোনের ডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, "গত বুধবার কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের এখানে এসেছিল। এ ঘটনায় একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।"

তিনি জানান, এরপরেও গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা অধিক সংখ্যায় এসেছে।

ডেমরার ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভাঙচুরের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ছয় প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

XS
SM
MD
LG