ভারতে এক অতি জটিল হার্টের সার্জারি জটিল অপারেশন ছাড়াই সম্ভব হল। হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের নামেই আতঙ্ক বাড়ে রোগীদের। হার্ট সার্জারি মানে সাধারণ মানুষের ধারণা, বুকের হাড়ে কাটাছেঁড়া করে দীর্ঘ এবং জটিল এক অস্ত্রোপচার যাতে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বেশি। হার্ট সার্জারি নিয়ে তাই ট্রমাও বেশি।
কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে হার্ট সার্জারি এখন আর জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার সম্ভব। ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার মিট্রাল ভালভ প্রতিস্থাপন কোনও জটিল অপারেশন ছাড়াই করলেন হরিয়ানার ফরিদাবাদ এইমসের (এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স) ডাক্তাররা।
ফরিদাবাদ এইমসের কার্ডিয়োথোরাসিক-ভাস্কুলার সার্জন ডা. অমিত চৌধুরী বলছেন, বৃদ্ধার হার্টে আগেও অপারেশন হয়েছিল। ১০ বছর আগে ক্যারোটিড অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয় বৃদ্ধার। তাছাড়া নানা রকম শারীরিক সমস্যা বা কোমর্বিডিটি ছিল রোগীর। তাই বুকের হাড় কাটাছেঁড়া করে জটিল অপারেশন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারত। সেই কারণে মিট্রাল ভালভ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার জন্য ইনভ্যাসিভ ট্রান্সক্যাথিটার পদ্ধতিকেই বেছে নেওয়া হয়।
মিট্রাল ভালভ হৃৎপিণ্ডের চারটি ভালভের মধ্যে একটি। ভালভগুলি হৃদপিণ্ডের মাধ্যমে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করে। মিট্রাল ভালভ হার্টের বাম অলিন্দ এবং বাম ভেন্ট্রিকলের মাঝখানে থাকে। এর কাজ হল বাম অলিন্দ থেকে বাম ভেন্ট্রিকলের দিকে রক্তকে প্রবাহিত করা। এই ভালভ থাকার কারণেই রক্ত বাম অলিন্দ ও ফুসফুসের পিছন দিকে চলে যেতে পারে না।
মিট্রাল ভালভ যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে হার্ট থেকে নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গে রক্ত প্রবাহিত হতে পারবে না। লিভার, কিডনি ইত্যাদি নানা অঙ্গ বিকল হতে শুরু করবে। সঠিক সময় এই ভালভটি বদলে না দিলে বা প্রতিস্থাপন না করলে রোগীর প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বাড়বে।
কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, বর্তমান সময়ে কার্ডিওলজির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে– কার্ডিওলজি ইন্টারভেনশন যেমন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, কার্ডিয়াক ডিভাইস যেমন পেসমেকার, আইসিডি, সিআরটি ইত্যাদি আর স্ট্রাকচারাল হার্ট ডিজিজ। এই স্ট্রাকচারাল হার্ট ডিজিজের নতুন দিক হল ‘টাভি’। এটা হল মূলত মিনিমাল ইনভ্যাসিভ সার্জারি যেখানে বুকের হাড় কাটার দরকার পড়ে না। পায়ে ছোট ছিদ্র বা ইনশিসন করে সেখান দিয়েই ভালভে অপারেশন করা হয় বা ভালভ প্রতিস্থাপন করা হয়। বৃদ্ধার যে নন-সার্জিক্যাল থেরাপি হয়েছে তার নাম ট্রান্সক্যাথিটার মিট্রাল ভালভ রিপেয়ার বা MitraClip। এখানেও কাটাছেঁড়া করার দরকার পড়েনি।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ নয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম। অস্ত্রোপচারের পরে খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন রোগী। আর কোমর্বিডিটির রোগী হলে যাঁদের শরীরে আরও নানা সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় অস্ত্রোপচারই অনেক নিরাপদ।