“দোকান-বাজার ও আরো নানা কাজে আমাদের বাইরে বেরোতেই হয়। বাইরে বেরোলে টয়লেটে যাওয়ার দরকার পড়ে। কিন্তু, পাবলিক টয়লেটে গেলেই দেখি লেখা থাকে পুরুষ/মহিলা। আমরা তো ছেলে বা মেয়ে নই। অন্য আরেকটা রূপ। তখন বুঝতে পারি না কোনটায় ঢুকব। হয়তো কোনো একটায় ঢুকে পড়লাম এবং সেখানে কেউ একজন আমাকে অপমান করল। এমনকি, বিভিন্নভাবে কটূক্তিও করা হয়,” এই অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার রূপান্তরকামী নারী শুভ দাস।
আবার, পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার রূপান্তরকামী নারী ও লিঙ্গকর্মী সিন্টু বাগুইয়ের কথায়, “আমরা যাঁরা এলজিবিটিকিউআইএ+ কমিউনিটির মানুষ তাদের পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে বেশ সমস্যা হয়। কাজের জন্য বাইরে বেরোতেই হয়। কিন্তু স্টেশন চত্বর, বাসটপগুলোতে টয়লেটের পরিকাঠামোর অভাব। টয়লেটে যাবার প্রয়োজনীয়তা হলেও সেই অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সারাদিন পর বাড়ি ফিরে তবেই টয়লেটে যাওয়া যায়। এটা তো ঠিক নয়। বহু মহিলাদেরও এই একই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। ভারতে, ২০১৪-এ নালসা জাজমেন্ট দেওয়া হয়। ট্রান্সজেন্ডার প্রোটেকশন অ্যাক্ট তৈরি হয়। তারপরেও, আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। আমাদের শেখানো হয় পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহারের কথা। কিন্তু, জনপরিসরে সে সুযোগ কোথায়?”
পাশাপাশি, কলকাতা শহরের বাসিন্দা দীপ্তরাজ সেন (নন-বাইনারি) জানাচ্ছেন, “একবার, কলকাতার মধ্যেই আমি এক বান্ধবীর সঙ্গে বেরিয়েছিলাম। তিনি রূপান্তরকামী মহিলা। রাস্তায় তার টয়লেটে যাবার দরকার পড়ে। সে যখন মহিলাদের টয়লেটে যেতে চাইছিল তখন সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরা বেশ হাসি মজা করছিল।” এই শহরেরই আরো এক বাসিন্দা, ইয়ুবরাজ রাহা (নন-বাইনারি)বলছেন, “কলকাতার শপিং মলগু্লোতেও টয়লেটে পুরুষ এবং মহিলার বিভাজন। যদিও অনেক রেস্টুরেন্ট, শপিং কমপ্লেক্স সহ অন্যান্য জায়গায়, একটাই টয়লেট থাকে, আলাদা করে কোন লিঙ্গ নির্দেশ করা থাকে না। কিন্তু, সেটা লিঙ্গ সচেতনতার জন্য নয়। বরং কিছুটা অর্থনৈতিক সুবিধে, কিছুটা জায়গার ঘাটতির জন্যই সে ব্যবস্থা করা হয়।” আবার, ক্যুইয়ার গোষ্ঠীর সদস্য শান্তনু বিশ্বাসের কথায়, “রোজ আমাদের স্টেশনের শৌচালয় ব্যবহার করতে হয়। স্টেশনের টয়লেটগুলোতে ক্যুইয়ার ব্যক্তিদের বেশ অসুবিধে হয়। তাছাড়া, যে কোন লিঙ্গেরই মানুষ হোন না কেন পাবলিক টয়লেটে অনেক সময় নিরাপত্তার অভাব হয়।”
জুন মাস প্রাইড মান্থ। প্রাইড মান্থ-এর উদযাপন জুড়ে থাকে সাতরঙা রামধনু। অথচ, ২০২৩ এর জুন মাসে দাঁড়িয়েও শুভ, সিন্টু, দীপ্ত, ইয়ুবরাজ কিংবা শান্তনুর সঙ্গে কথাবার্তা থেকে বোঝা যায় শহর থেকে গ্রাম, স্টেশন থেকে শপিং মল, এলজিবিটিকিউআইএ+ গোষ্ঠীর মানুষদের শৌচালয় ব্যবহারে যথেষ্ট অসুবিধে রয়েছে। ঠিক একইভাবে, এই ঘটনাগুলোর মধ্যে দিয়েই উঠে আসছে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় তৈরি গুরুত্বও।
২০২১ সালের জুন মাসে, ভারতের রাজধানী দিল্লির পৌর পরিষদের উদ্যোগে একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচালায় তৈরি করা হয়েছিল। সম্প্রতি, চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ভারতের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃতি পেয়েছে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিভাগের একটিশৌচালয় খুলে দেওয়া হয়েছে সকল লিঙ্গ পরিচিতির মানুষের জন্য, এটি একটি ‘সিঙ্গল ইউজ টয়লেট’ অর্থাৎ পুরুষ, মহিলা ও অন্যান্য লিঙ্গ পরিচিতির মানুষদের জন্য একটিই শৌচালয়, যেখানে লিঙ্গ বিভাজন থাকছে না। তবে এই শৌচালয় ব্যবহারে রূপান্তরকামী মানুষেরা কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন সে প্রশ্ন উঠছে।
এই নিয়ে ইংরেজি বিভাগেরই স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া অন্বেষা সাহার গলায় অবশ্য বেশ উচ্ছ্বাস।অন্বেষা বলছেন, “নিঃসন্দেহেএটা ভালো উদ্যোগ। টয়লেট তো লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়াটাই উচিত।এই কাজটা করতে বেশ দেরি হয়েছে।আরো আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। যারা পুরুষ এবং মহিলা — এইলিঙ্গযুগ্মের বাইরে নিজেদের দেখেন তাঁদের এ নিয়েদীর্ঘদিন লড়াই করতে হয়েছে।”
কিন্তু অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক ছাত্রী ও ক্যুইয়ার হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করা ত্রিনাঞ্জনারায়ের কথায়, “এইযে লিঙ্গ-নিরপেক্ষটয়লেট তৈরি হল তা পড়ুয়াদের ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট নয়।বিষয়টা অনেকটাই প্রচার-সর্বস্ব।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়থেকে কয়েক পা দূরেই শহরের অন্যতম জনপ্রিয়সাউথ সিটি মল। সেখানেও যখন আমি মহিলাদের টয়লেটে যাই, আমারসাজ-পোশাকএবং চেহারার কারণে খুব খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন অনেকেই। তাই, শুধুযাদবপুর নয় তার বাইরেও লিঙ্গ-নিরপেক্ষশৌচালয় হওয়ার দরকার রয়েছে। তবে, তার গঠন, পরিকাঠামোএবং স্বাস্থ্যবিধির দিকে নজর দেওয়া জরুরি।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরইসাহিত্য গবেষক প্রবুদ্ধ ঘোষের কথায় এই ধরনের উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে প্রগতিশীল পদক্ষেপ হলেও তা শুধু সাম্মানিক হয়ে থাকলে চলবে না, “এই টয়লেট-টি ২০১৮ সাল নাগাদ এটা হওয়ার কথা থাকলেও, নানাজটিলতা ও কোভিডপরিস্থিতে পিছিয়ে গেছিল। এখানে আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক বিভাগেও লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচালয় রয়েছে।খুব দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিল্ডিংগুলোতেও এটা চালু করতে হবে।কলকাতার প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে এরকম একটি টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের উপযুক্ত নয়। আশা করব বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষ লিঙ্গ নিরপেক্ষ টয়লেটগুলির স্বাস্থ্যবিধিরদিকেও জোর দেবেন।” লিঙ্গ বিষয়টিকে তিনি মনে করেন একপ্রকার রাজনীতি এবং সমাজের বড় অংশের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে – শহুরে, উচ্চবিত্ত, উচ্চ শিক্ষিত পরিসরেই কেবল ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গ পরিচিতির বিষয়টি দেখা যায়, সেই ভাবনাটি পরিবর্তনের প্রয়োজনের জন্য লিঙ্গ রাজনীতি নিয়ে আলোচনাও আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন। এই সূত্রেই চলে আসে জনপরিসরে সুলভ শৌচালয় লিঙ্গ-নিরপেক্ষ হওয়ার প্রসঙ্গ, “জনপরিসরে শৌচালয়কে লিঙ্গ-নিরপেক্ষকরে তোলা আসলে রাজনৈতিক পদক্ষেপ।বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক স্তরের মধ্যেও, একেবারেপ্রান্তিক মানুষদের মধ্যেও এই বিষয়টি রয়েছে।এবং সেখানে তৃতীয়-লিঙ্গেরমানুষেরা তাঁদের পরিচিতি সামনে আনতে লজ্জা পান অনেক বেশি।সেই জায়গা থেকেই লিঙ্গ-নিরপেক্ষশৌচালয়ের গুরুত্ব কতখানি সেই বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার দরকার রয়েছে।শুধুমাত্র যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেঙ্গালুরুর মত একটি শহরে লিঙ্গ-নিরপেক্ষশৌচালয় গড়ে উঠলেই তাতে অবস্থা বদলাবে না।তার জন্য সমাজের বৃহত্তর অংশ এবং প্রান্তিক অংশগুলিতেও লিঙ্গ-নিরপেক্ষশৌচালয় গড়ে ওঠা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।”
ঠিক এ প্রসঙ্গেই, পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের সমাজকর্মী ও রূপান্তরকামী মহিলা সুমি দাস বলছেন, “ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যখন ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড তৈরির রায় দিয়েছিল, তখন তার মধ্যেই আলাদা করে রূপান্তরকামীদের জন্য শৌচালয় তৈরির কথা বলা হয়। আমরা বারবার চেষ্টা করেছি সরকারের কাছে পৌঁছতে, যাতে তারা অন্তত এই দিকে জোর দেন। বাড়ির বাইরে বেরোলে আমাদের পাবলিক টয়লেট বা সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করার দরকার পড়ে। সেখানে দাঁড়িয়ে রূপান্তরকামী মানুষের টয়লেট বিষয়টা নিয়ে সমস্যা হয়। এখন লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচালয়েও কিন্তু একজন মানুষের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। তাই, পাবলিক টয়লেট ব্যবহারে নিরাপত্তার প্রশ্নটায় গুরুত্ব দেওয়াও দরকার।” এর সঙ্গে তিনি কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলছেন, “জেলাগুলিতে সুলভে শৌচালয় পাওয়ার সু্যোগই কম। যা আছে তাতে কোন স্বাস্থ্যবিধিই মানা হয় না। তাই, শহরের দু’একটা জায়গায় লিঙ্গ-নিরপেক্ষ টয়লেট রয়েছে মানেই সমস্যার সমাধান হবে এমনটা নয়। বিষয়টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সরকারি উদ্যোগ সবচেয়ে আগে দরকার।”
লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় আসলে যে লিঙ্গ সচেতনাহীনতা ও অসংবেদনশীল জায়গা থেকে ‘চ্যারিটি’ করার মানসিকতা থেকে করে দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রেই এবং রূপান্তরকামী নারী ও পুরুষদের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা না ভেবেই যে এধরনের উদ্যোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিই তুলে ধরলেন ভারতের দিল্লির ও পি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত, লিঙ্গ ও মানবীবিদ্যা এবং সাহিত্যের অধ্যাপক ও বিকল্প গণমাধ্যম কর্মী নন্দিনী ধর। তিনি বলেন, "লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয়ের দাবি আজও সর্বজনগ্রাহ্য নয়। এবং যে যে জায়গাগুলোতে এখন পর্যন্ত এটা গড়ে উঠেছে তা খুব একটা কার্যকরীও নয়। লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয়ের দাবি আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই উঠে এসেছে। যেখানে যেখানে কর্তৃপক্ষ এই দাবি মেনে নিয়েছেন, সেখানেও কিন্তু এটা তৈরির জন্য তৃতীয় লিঙ্গ বা এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির মানুষদের সঙ্গে কোন আলাপ আলোচনা করা হয়নি। গোটা বিষয়টাকেই দেখা হয়েছে যে, দাবি রয়েছে তাই বেশি ঝামেলা না করে যতটা মিটিয়ে দেওয়া যায়। সেখানে সেই শৌচালয়ের গঠন প্রক্রিয়া নিয়েও ভাবা হয় না। সামগ্রিকভাবে, জনপরিসরে যে পিতৃতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতা রয়েছে তা নিয়েই তো কথা বলা হয় না। যার ফলে, অন্য যেকোনো লিঙ্গ এবং প্রতিবন্ধীদেরও এক জায়গাতে করে দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের বিশেষ বিশেষ চাহিদা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হয় না। আলাপ পরিচয়ও হয় না। আমাদের সমাজে মেয়েদের এমনভাবে ট্রেনিং দেয়া হয়, যেন সারাদিন বাইরে থাকলেও টয়লেটে যাওয়ার বিষয়টা সে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার ডিসিপ্লিনটা রূপান্তরকামী মানুষদেরও শেখানো হয়। তাঁর কাছে তখন, টয়লেটে যাবার হিউমিলিয়েশনের চেয়ে না যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয়। এইভাবে নিজেদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে এমন একটা লজ্জাবোধ তৈরির করা হয়। আসলে, এর মধ্যে দিয়ে রূপান্তরকামী মানুষদের বিশেষ শৌচালয়ের দাবি বিষয়টাই অন্যায্য ও অবৈধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলে।"
আবার লিঙ্গ নিরপেক্ষ শৌচালয় যখন তৈরি করা হচ্ছে তখন সেখানেও আলাদা করে রূপান্তরকামী নারী ও রূপন্তরকামী পুরুষের কথা ভাবা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার রূপান্তরকামী পুরুষ ও সমাজকর্মী রাহুল মিত্র জানাচ্ছেন, “রূপান্তরকামী মহিলাদের থেকে রূপান্তরকামী পুরুষদের সৌলভ শৌচালয় ব্যবহারের অসুবিধে বেশি। রূপান্তরকামী পুরুষরা যখন পাবলিক টয়লেটের পুরুষ বিভাগে যায় সেখানকার গঠন এমনই থাকে যা তাদের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয়। এ নিয়ে আমরা অনেকবার সরব হয়েছি।” তাঁর কথায়, “কর্তৃপক্ষ বুঝতেই পারে না যে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ টয়লেটের গঠন কেমন হবে। আসলে তাদের চিন্তা লিঙ্গের চেনা ছকেই আটকে রয়েছে। হয়তো তারা বুঝতে চেষ্টাই করেন না। রূপান্তরকামী পুরুষদের বহু জায়গাতেই টয়লেটে যেতে অসুবিধা হয়। বাড়ির বাইরে থাকলে সেই অসুবিধে নিয়েই সারাদিন সারারাত কাটাতে হয় প্রায়ই। প্রাইভেট উদ্যোগে দু’ এক জায়গায় পুরুষ, মহিলার পাশেই একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ টয়লেট তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে এটা না করা গেলে সমস্যার অন্ধকার থেকে মুক্তি নেই।”
সামগ্রিকভাবে সামাজিক মানসিকতার বদল না হলে এবং লিঙ্গ নিরপেক্ষতা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি না হলে এ ধরনের উদ্যোগ যে খুব কার্যকরী হবে না সেই কথা উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যাপিক অর্পিতা বল। তাঁর বক্তব্য,“আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে, যাঁরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ তাঁরা যখন টয়লেট ব্যবহার করেন বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বুলিড হন। তাই প্রতিটি জায়গায় লিঙ্গ-নিরপেক্ষ টয়লেট গড়ে ওঠার দরকার রয়েছে। কিন্তু, তা একবার করে দিতে পারলেই কর্তৃপক্ষের দায় শেষ হয়ে যায় না। এমনিতেই মেয়েদের ওপর পুরুষদের আধিপত্য। এখন যদি তৃতীয় লিঙ্গের কথা ওঠে তবে, পুরুষ এবং মহিলাদের আধিপত্য তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ওপর রয়েছে। তাই, যে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শৌচালয় তৈরি হল, তা পুরুষ বা মহিলা বাদ দিয়ে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ব্যবহার করতে কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন সেদিকে নজর রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। সামগ্রিক এই বিষয়টার পিছনে এক প্রকার রাজনীতিও রয়েছে। সমাজে তৃতীয় লিঙ্গ বা রূপান্তরকামী মানুষেরা প্রান্তিক। সেই কারণে, তাদের সুবিধে-অসুবিধে এবং চাহিদার সঙ্গে কর্তৃপক্ষ যদি সম্পৃক্ত না হন, তাহলে উদ্যোগ সফল হবে না। ব্যক্তিগতভাবে জানি, প্রান্তিক লিঙ্গ পরিচয়কে সমাজে অনেকেই এক ধরনের পারভার্সান অথবা মানসিক অসুস্থতা বলে মনে করেন। তাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আরো বেশি করে রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রয়োজন রয়েছে।"