চার সন্তানের কাছে টানা ২৩ বছর পর মৃত হিসাবে থাকা আমেনা খাতুন আজ ফিরে এসেছেন নেপালের কাঠমান্ডু থেকে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহায়তায় বিশেষ ফ্লাইটটি দুপুর ১টায় আমেনাকে নিয়ে অবতরণ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তার সঙ্গে ছিলেন নেপালে কর্মরত বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মাসুদ আলম। আর বিমানবন্দরে আমেনাকে স্বাগত জানাতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন তার চার সন্তানসহ স্বজনরা। বিমানবন্দরে পরিবারের সদস্যরা সবাই ছিলেন আবেগাপ্লুত। পরে সন্তানদের কাছে আমেনাকে তুলে দেন কনস্যুলার মাসুদ আলম।
ভয়েস অব আমেরিকার কাছে মাসুদ আলম তুলে ধরেন আমেনা খাতুনকে উদ্ধার করার সেই কাহিনি। নেপালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পোস্টের ভিত্তিতে আমেনাকে উদ্ধার করা হয় চলতি বছর জুন মাসে। বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় খুঁজে বের করেন আমেনার পরিবারের সদস্যদের।
বগুড়া ধনুট উপজেলার মাজবাড়ি গ্রাম থেকে আমেনা হারিয়ে যান ২৩ বছর আগে। চার সন্তান অনেক বছর মায়ের অপেক্ষায় ছিলেন। খোঁজাখুঁজিও কম করেননি। কিন্তুু কোথাও খুঁজে পাননি তাকে। আমেনা খাতুন নিজেও বলতে পারছেন না কি করে তিনি নেপাল চলে গিয়েছিলেন। সেখানে এত দিন বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও রেস্টুরেন্টে কাজ করে জীবন চালাতেন। কিন্তুু বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে তিনি কাজ করার ক্ষমতা হারান।
করোনার পর পরিস্থিতিও বদলে যায়। অনেকটা অসহায় হয়ে পথে নামেন। ভিক্ষা করতেন, থাকতেন ফুটপাথে। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন। তাকে রাখা হয় জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে। স্থানীয় এক ব্যক্তি বিষয়টি ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফেসবুক পোস্টে আমেনাকে বাংলাদেশি বলা হয়।
ফেসবুক কমেন্ট করেন নেপালে বাংলাদেশ ইয়ুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী। তিনি এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের। এরপরই বিষয়টি নজরে আসে কনস্যুলার মাসুদ আলমের। তিনি যোগাযোগ করেন উদ্ধারকারীদের সঙ্গে। তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিষয়টি জানানো হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে। গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে জানতে পারে বগুড়া ধনুটে আমেনা খাতুনের বাড়ি। তার স্বামী মারা গেছে। সন্তানরা মাকে খুঁজে না পেয়ে ভেবেছিল তাদের মা মৃত। সন্তানদের ভোটার আইডি কার্ডে লেখা আমেনা খাতুন মৃত। তারাও ভাবতেও পারেনি তাদের মা আবার জীবিত ফিরে আসবে।
আমেনা খাতুনের স্বামী আজগর আলী প্রামাণিক মারা গেছেন অনেক দিন আগে। আজগর আলী পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। আজগর ও আমেনার বড় ছেলে আমজাদের বয়স এখন ৬০ বছর। মেজো ছেলে ফটিক ৫৮ ও ছোট ছেলে ফরাজুল ৫৪ ও মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫। তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। মায়ের কথা শোনার পর প্রথম বিশ্বাস করতে তাদের কষ্ট হচ্ছিল। পরে ছবি দেখে তাদের চিনতে পারে। আমেনা খাতুনের এখন বয়স ৮০ বছর।
মাসুদ আলম জানান, পুরো বিষয়টি তার কাছেও বিস্ময়ের। আমেনা খাতুনকে নিয়ে তিনি নেপাল থেকে এসেছেন বিশেষ ফ্লাইটে। লকডাউনের কারণে তাকে এতদিন দেশে আনতে পারেননি। বাংলাদেশের জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্যরা বিশেষ ফ্লাইটে গেছে নেপাল। সেখানে তারা ফুটবল ম্যাচে অংশ নেবে। সেই ফ্লাইটে করে আমেনা খাতুনকে দেশে আনা হয়েছে।
মাসুদ আলম বলেন, আমেনা খাতুনকে দেশে এনে সন্তানদের কাছে তুলে দেওয়া পর্যন্ত বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, পুরো ঘটনায় খুব ভালো লাগছে আমেনা খাতুনকে তার পরিবারের কাছে তুলে দিতে পেরে।