অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

দিনাজপুরে গড়ে তোলা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের জন্য 'মানবপল্লী'


র‍্যালিতে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন - ফাইল ফটো- এপি
র‍্যালিতে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন - ফাইল ফটো- এপি

বাংলাদেশের দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর তীরে তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আবাসন পল্লী। আট একর জমিতে টিনের ছাউনি, কাঠের মেঝোর সারি সারি ঘরে ঠাঁই হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দাদের। দিনাজপুর সদরের বেংগিবেচা এলাকার এই বসতিটার নাম দেওয়া হয়েছে 'মানবপল্লী'। আর এই পল্লীতে রাখা হয়েছে সকল সুযোগ সুবিধা।

বাংলাদেশে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা পাওয়া মানুষগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চাঁদা তোলা। কিন্তুু দিনাজপুরে যারা নতুন আবাসন পেয়েছেন, তারা বলছেন, ছেড়ে দিয়েছেন চাঁদা তোলা। চেষ্টা করছেন বিভিন্ন পেশায় নিজেদের খাপ খাওয়াতে। নবজাতককে জিম্মি করে এখন আর টাকা আদায় করেন না তারা। । দিনাজপুরে তারা প্রশিক্ষণ পেয়েছেn, অর্থ সহায়তা পেয়েছেন সরকারিভাবে। এই কারনে চেষ্টা করছেন স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে।

এরকম নতুন জীবন পাওয়া একজনের নাম পাপ্পু, যিনি দিনাজপুর জেলা স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, ছেলে হিসেবে জন্ম নিলেও ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকে তার শরীরে। ধারণ করতে থাকেন মেয়েলি স্বভাব। এক সময়কার চেনা সহপাঠীরা অচেনা হয়ে উঠতে থাকে। উপহাস শুরু করে। নিজের পরিবারেও প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হতে থাকেন। তাই এইচএসসির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে করেননি।

আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। নিজের সমাজচ্যুত হয়ে হিজড়াদের সঙ্গে ভিড়ে যান। তিনি বললেন, "আমরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করছি মানব পল্লীতে। নিজেদের আয়ে চেষ্টা করছি চলতে। পাপ্পু বলেন, ‘হিজড়াদের’ জন্য এমন আবাসন তাবৎ বিশ্বেই বিরল নজির হয়ে উঠেছে।"

দিনাজপুর সদর আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম ২০১২ সালে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিশেষ এ পল্লী গড়ে তোলেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলোর হাতে তুলে দেন জমির দলিল। স্বনির্ভর করে তোলার জন্য বরাদ্দ দেন প্রয়োজনীয় অনুদান। কারিগরি শিক্ষা আর পশুপালনে আয়োজন করেন নিয়মিত প্রশিক্ষণ। মাছচাষের জন্য দেন পুকুর আর সফল এই উদ্যোগের জন্য সোশ্যাল ইনোভেটর ক্যাটাগরিতে আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশনের ডব্লিউএলএফ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন এমপি ইকবালুর রহিম। দিনাজপুরের এই এমপি জানান, "এইভাবে তাদের পাশে সারাদেশে সবাই এগিয়ে এলে কোন সমস্যা থাকবে না। সমাজে ওরা আর অবহেলিত থাকবে না। মানুষের বাড়ি যাবে না চাঁদা নিতে। মানুষ হিসাবে দেখতে হবে তাদের।"

মানবপল্লীতে মসজিদ-মন্দিরও স্থাপন করা হয়েছে। আছে মাদ্রাসা, স্কুল। মানবপল্লীর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দুই বাসিন্দাকে চাকরি দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাছচাষের জন্য পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পেছনে ১.৮ শতকের পুকুরটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । দেওয়া হয়েছে গরু ও ছাগল। বছরজুড়েই দেওয়া হচ্ছে কাপড় সেলাই ও পোশাক তৈরি, হাঁস-মুরগি এবং গরু-ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ।

সমাজসেবা অধিদফতর সূত্র বলছে, বাংলাদেশে তৃতীয় লিঙ্গ বা ‘হিজড়ার’ সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার।

XS
SM
MD
LG