শনিবার সকাল ৯টা থেকে প্রায় ১৫ হাজার কেন্দ্রে এই টিকাদান শুরু হয়। এসব কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় ছিল। হাজার হাজার মানুষ টিকার জন্য ভিড় জমান। গণটিকাদানের প্রথম দিনে মানুষের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ। সকাল থেকেই মানুষজন লাইনে দাঁড়িয়ে যান। যদিও স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। বেশকিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে। চট্টগ্রামের এক কাউন্সিলর বিশেষ টোকেন চালু করেন। এই টোকেন ছাড়া কেউ টিকা দিতে পারেননি। হবিগঞ্জের এক চেয়ারম্যান নিজের লোকদের টিকা দিতে গিয়ে জনতার হাতে লাঞ্ছিত হন। মৌলভীবাজারের জুড়িতে দুটি কেন্দ্রে দুপুর ১২টার মধ্যে টিকা শেষ হয়ে যায়। বগুড়ায় সার্ভার বিপর্যয়ে টিকাদান বিলম্বিত হয়। সিলেটের গোয়াইনঘাটের একটি কেন্দ্রে একজনকে দুটি টিকা দেয়া হয়। একই ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায়। একজন নারীকে দুটি টিকা দেয়া হয়। রংপুরের পীরগঞ্জে ঘটে অন্য ঘটনা। উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে টিকা নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। আলেফ উদ্দিন(৮০)নামের এই বৃদ্ধের লাশ নিয়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা টিকাকেন্দ্রে অবস্থান নেন। তাদের দাবি, টিকা নেয়ার কারণেই আলেফ উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। আলেফ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান জানান, বৃদ্ধের মৃত্যু টিকার কারণে হয়েছে কিনা তা ময়না তদন্তের পরেই জানা যাবে।
গ্রামে-গঞ্জে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করেছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রামের মানুষজন। টেস্টের ব্যবস্থা না থাকায় জানা যাচ্ছে না কারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর এসেছে, সর্দি-কাশি নিয়েই অনেকে টিকা নিয়েছেন।
একটি ইউনিয়নের তিনটি কেন্দ্রে টিকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ স্থানেই দেখা যায়, তিনটির স্থলে একটি কেন্দ্র করা হয়েছে। এতে করে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। অনেক স্থানে টিকার জন্য বিকাল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন অনেকেই। প্রত্যেক কেন্দ্রে ২০০ করে টিকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোথাও কোথাও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। যারা টিকা দিতে পারেননি তাদেরকে বলা হয়েছে, কাল দেয়া হবে।
আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে কাদের টিকা দেয়া হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল। ফলে এসব কেন্দ্রে কোনো বাড়তি ভিড় দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার একটি কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা জানান, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা আগেভাগেই কাদেরকে টিকা দেয়া হবে তা নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। আগের দিন তারা স্লিপ বন্টন করেন। ফলে, স্লিপ ছাড়া কেউই টিকা দিতে পারেননি।
সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে মানুষের জটলা দেখে মনে হয়েছে, এ যেন একটি জনসভা। গাজীপুরের ওয়ার্ড মেম্বার, চেয়ারম্যানরা তাদের নিজেদের লোকদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা প্রদানের তালিকা তৈরি করেন। এতে করে শত শত মানুষ টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ টিকা পাবেন।
গ্রামে ও পৌরসভায় দেয়া হয়েছে চীনের সিনোফার্মের টিকা। মডার্নার টিকা দেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনে।
উল্লেখ্য যে, টিকা দেয়ার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ এতোটাই হবে, সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন দেখে তা আঁচ করা গিয়েছিল। প্রতি মিনিটে পাঁচ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত দুই কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ২৬১ জন। এ সময় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ১৩৬ জন।