কোনো কোনো ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীযতাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল এক সাক্ষাৎকারে আমি বলেছি, যদি অন্তবর্তী সরকার পক্ষপাতমুক্ত থাকতে না পারে, তাহলে নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তবর্তী সরকার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারছে না।
এ সময় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে যেতে অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। পাশাপাশি বর্তমানে দেশ যেসব সমস্যার মুখোমুখি; তা সমাধানেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত সরকারের। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারই জনআকাঙ্ক্ষা ও মানুষকে দেওয়া অঙ্গীকার পূরণ করতে সক্ষম হবে।
কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই বিএনপি নির্বাচনের দাবি করছে না বলে জানান তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, যদি নির্বাচন আয়োজনে অযাচিত সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অশুভ শক্তি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। তবে এখনই না, ন্যূনতম সংস্কারের পরেই নির্বাচন চাচ্ছি।
পাশাপাশি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবেশপথ।
“সংস্কারের পরেই নির্বাচন হওয়া দরকার বলে মনে করে জনগণ। কিন্তু আমরা কী চার-পাঁচ বছর কিংবা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করব? নির্বাচন এমন দেরিতে হলে লোকজন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে,” বলেন মির্জা ফখরুল।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সংস্কার প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুলের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত: নাহিদ ইসলাম
এদিকে বিবিসি বাংলায় মির্জা ফখরুলের সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেছেন।
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেক দিন স্থায়ী হবে—এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলছে সামনের নির্বাচনের পরে। ছাত্ররাই এই সরকার এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১ সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টুর’ আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক–এগারো সরকারের প্রস্তাবনা করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। আমি মনে করি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।”
নাহিদ ইসলাম আরও লিখেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানা সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের মহাপরিদর্শক নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এ রকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা—সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব।”