অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জুলাই-অগাস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন: জাতিসংঘ মিশনের প্রতিবেদন মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে


সুইজারল্যান্ডের দাভোসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২২ জানুয়ারি, ২০২৫।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুক এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২২ জানুয়ারি, ২০২৫।

জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা মধ্য-ফেব্রয়ারিতে প্রকাশ করা হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুক এমন তথ্য জানিয়েছেন।

স্থানীয় সময় বুধবার (২২ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক হয়েছে। পরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন।

ফলকার টুক বলেন, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা সামনে রেখে বাংলাদেশের সঙ্গেও এটি শেয়ার করা হবে।

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের সময় অপরাধের তদন্ত করায় জাতিসংয়ের মানবাধিকার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া, ৬টি স্বাধীন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনও একই সময়ে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাদের পর্যবেক্ষণ, এসব প্রতিবেদন একটি অন্যটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছেন ড. ইউনূস। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পরিপূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে টুক বলেন, তিনি এ বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত জুলি বিশপসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলবেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতন আন্দোলন এবং তার পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশে কাজ করেছে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশন। ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তারা।

অভিযোগের সত্যতা উদঘাটন, দায়দায়িত্ব চিহ্নিতকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সুপারিশ করবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং (অনুসন্ধান) দল।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুক
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুক

এর আগে ১৬ আগস্ট প্রকাশিত “বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ এবং অস্থিরতার প্রাথমিক বিশ্লেষণ” শীর্ষক জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও আন্দোলনকারীদের দেয়া রিপোর্ট অনুসারে, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে বাংলাদেশে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনার খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। কারণ কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও চলাচলে বিধিনিষেধের কারণে তথ্য সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষদের দ্বারা হাসপাতালগুলিকে হতাহতদের বিশদ বিবরণ দিতে বাধা দেয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় অপ্রয়োজনীয় এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি ব্যবহার করেছে এমন দৃঢ় ইঙ্গিত রয়েছে যার কারণে স্বাধীনভাবে তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

এছাড়া, ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে বিক্ষোভের সময় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেই সময় থেকে প্রতিশোধমূলক হামলায় নিহতদের সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। ৭ থেকে ১১ আগস্টের মধ্যে বেশ কিছু প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে, যারা সহিংসতায় আহত হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্যদের ওপর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং হামলার পাশাপাশি প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দল এবং পুলিশের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও প্রতিশোধমূলক হত্যার খবরও পাওয়া গেছে, বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া, প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ অগাস্ট উন্মত্ত জনতা বাঁশের লাঠি, লোহার রড ও পাইপ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ভিডিও ধারণ না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি মানবাধিকার বিষয়ক নির্দেশনা মেনে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের এই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় হাইকমিশনার ফলকার টুক ঘোষণা করেন, একটি দল ঢাকা সফর করবে। জাতিসংঘের দলটি সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের পদ্ধতিগুলি নিয়েও আলোচনা করবে।

বিক্ষোভে আটক ও আহত হওয়া ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে গত বছর ২২ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত জাতিসংঘের একটি দল বাংলাদেশে যায়।

দলটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করে।

XS
SM
MD
LG