এক বছরেরও বেশী সময় ধরে চলতে থাকা কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় অনেক অনেক বেশি পরিমাণে টিকার ডোজ পাঠানো হচ্ছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গণটিকা কেন্দ্রে পরিণত হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর সেবা করছে। এ বিষয়ে ভিওএ'র সংবাদদাতা ক্যাথলিন স্ট্রাইকের প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, আমেরিকানরা কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেই চলেছেন এবং ভ্যাকসিনগুলি উপলভ্য হওয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গণ টিকা কেন্দ্র হিসাবে চালু হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হল ভার্জিনিয়ার অ্যাপালাকিয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত শেনানডোহ বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ট্রেসি ফিৎসিম্মনস জানিয়েছেন যে, জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি থেকে এখানে ৫০,০০০ লোককে টিকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের এখানে যে শুধু জায়গা আছে তা নয়, তবে আমাদের এই কাজের জন্য দক্ষতাও রয়েছে। আমাদের একটি ফার্মাসি স্কুল, নার্সিং স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য একটি স্কুল রয়েছে, এবং তারা সকলেই টীকা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল কীভাবে একটি বড় সংস্থা চালাতে হয় সেটা জানে, তাই তারাই আমাদের সহায়তা করেছে।”
২৩ শে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার কেবলমাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ একটি ভ্যাকসিন পেয়েছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি পূর্বাভাস দিয়েছে যে, আগস্ট মাসের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ এই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে। শেনানডোহের ক্লিনিকে ৭৫০ স্বেচ্ছাসেবী কর্মরত রয়েছেন, যার মধ্যে কিম্বার্লি সিগুয়েঞ্জার মতো ছাত্রীও রয়েছে, যে জীববিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য এবং স্প্যানিশ নিয়ে পড়াশুনা করছে এবং রোগীদের সুবিধার জন্য কথোপকথন অনুবাদ করে সাহায্য করছে। শিক্ষার্থী কিম্বার্লি সিগুয়েঞ্জা বলেন, "গত সপ্তাহে আমার প্রিয় জিনিসগুলির মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে, যা হয়েছিল, তা হল এই যে আমি একজন স্প্যানিশ ভাষী মহিলাকে দেখেছিলাম যিনি, তার আগের সপ্তাহেও এখানে এসেছিলেন। এই মহিলা জানতেন যে এটি একটি নিরাপদ জায়গা যেখানে ভাষা্র কোনও সমস্যা হবে না, এবং তিনি প্রয়োজনীয় সব তথ্যই পেতে পারবেন।"
কাওথের আল আলী মে মাসে ফার্মাকোলজিতে তার ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করবেন। এক বছর সময় পেরিয়ে গেছে যখন থেকে তিনি তার স্বামী এবং পরিবারকে সৌদি আরবে রেখে এখানে এসেছেন, কিন্তু ভার্জিনিয়ায় বসবাসকারী মানুষদের এই টিকা প্রদানের কাজ তাকে যথেষ্ট ব্যস্ত রেখেছে। ছাত্রী কাওথের আল আলী বলেন, "আমি আমার সময় খুব ভাল ভাবেই কাটাচ্ছি, মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা, রোগীদের সাথে কথা বলার, তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা, এমনকি জ্বর হলে তাদের কাউন্টার থেকে কোন কোন ওষুধগুলি গ্রহণ করা উচিত সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, এসব নিয়ে আমি খুবই ব্যস্ত থাকি।"
শেনানডোহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ট্রেসি ফিৎসিম্মনস আরও বলেন, “আমরা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য শুধু আমাদের যা করণীয় সেটাই করতে পারি, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, প্রত্যেকেরই এই ভ্যাকসিনের উপর যেন সমান অধিকার থাকে। আপনি যত টাকাই আয় করুন না কেন, যে ভাষাতেই কথা বলুন না কেন, আপনি শিক্ষিত হন বা অশিক্ষিত হন, আপনার বাড়ি থাকুক বা আপনি গৃহহীন হন, এই ভ্যাকসিনে প্রত্যেকেরই সমান অধিকার আছে।"
ট্রেসি ফিৎসিম্মনস আরও আশা করছেন যে, ভ্যাকসিনের উৎপাদন ক্রমশঃ বাড়তেই থাকবে। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে শেনানডোহ ক্লিনিক দিনে অন্ততঃ ৬,000 মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান করতে সক্ষম হবে।