চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগেই বোঝা যাচ্ছে যে মিয়েনমারের বিরোধীদল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমক্র্যাসি সেখানকার সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে । মিয়ান্মারের এই নির্বাচনের ফলাফল এবং এর প্রভাবও প্রতিক্রিয়া নিয়ে,শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত Regional Centre for Strategic Studies এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ কথা বলেছেন ভয়েস অফ আমেরিকার আনিস আহমেদের সঙ্গে।
তিনি বলেন যে নির্বাচনে ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমক্র্যাসির এই বিজয় অত্যন্ত তাৎপর্যপুর্ণ বিষয়। তিনি এই বিজয়কে সন্দেহাদতীত ভাবে ঐতিহাসিক বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন । তিনি বলেছেন সাংবিধানিক কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্বেও তিনি মনে করেন , যে ভাবে বিপুল সংখ্যক লোক এই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে , সেটা গণতান্ত্রিক ভাবে মিয়ানমারকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সেদিক দিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ অত্যন্ত আশাবাদী মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। তিনি বলেন যে মিয়ানমারের সংবিধানে সামরিক বাহিনীর গুরুত্ব থাকা সত্বেও , আগেকার পরিস্থিতি এখন আর নেই । কেবল জনগণ নয় , সামরিক বাহিনী ও মনে করে যে মিয়ানমারের উন্নয়নের জন্য বিশ্বায়নের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত হবার দরকার আছে। আর বিশ্বায়নকে স্বাগত জানানোর মানেই হচ্ছে রাজনৈতিক পরিবর্তন , গণতন্ত্রায়নও। অতএব এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর মনোভাবেও একটা বড় রকমের পরিবর্তন এসছে।
একটা কথা বিশ্লেষকরা বলছেন যে অন সান সুচি ‘র দলের এই সম্ভাব্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ। মিয়েন্মারের মুসলমানরা , বিশেষত রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নন । সে ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন করার প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়েছে কী না জানতে চাইলে অধ্যাপক আহমেদ বলেন যে তিনি নিজেও সে দেশে যতটা দেখে এসছেন তাতে তার মনে হয়নি যে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ মিয়ানমারের সর্বত্র বিরাজ করছে ; ইয়াঙ্গুনে হয়ত কিছুটা থাকতে পারে , এলাকা ভিত্তিক হয়ত কিছুটা আছে কিন্তু এটা সামগ্রিক কোন ব্যাপার নয়। তিনিন বলেন যে একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে কিছুটা হয়ত ট্যাক্টিকাল কারণে আওন সান সু চি নিজেও কোন পদক্ষেপ নেননি কিন্তু তিনি বলেছেন যে তারা সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন। বরঞ্চ বলা দরকার যে একটা পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশ বিশেষত বাংলাদেশের সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি বলেন মাইন্ডসেট পরিবর্তনের জন্য প্রচুর হোম-ওয়ার্ক করা দরকার যেমন মিয়ানমারের তেমনি বাংলাদেশেরও । বিভিন্ন কারণে যে নেতিবাচক মাইন্ড সেট তৈরি হয়েছে সেখানে একটা পরিবর্তন আনা দরকার । স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানিকতা থেকেও বড় কথা হলো কি ভাবে দু দেশের জনগণকে এক সাথে আনা যেতে পারে যাতে আস্থা বৃদ্ধি পায় , বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে আদান প্রদান হবে এবং সামগ্রিক ভাবে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষে একটা বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন। তিনি আশাবাদী যে মায়ানমারে এই গণতান্ত্রিক বিবর্তন একটা সদর্থক ভূমিকা রাখবে।