বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালিবানের চীনপ্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর কয়েক সপ্তাহ পরেই আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে এসেছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালিবানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অতীতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন আফগানিস্তানের প্রতি একটি বাস্তববাদী পন্থা অবলম্বন করছে।
ওয়াশিংটনের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির এলিয়ট স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শন রবার্টস বলেন, মুষ্টিমেয় যে সব দেশের সরকার তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে তাদের মধ্যে চীন প্রথম যারা ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে।
রবার্টস ভিওএকে বলেন, “চীন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১৯৯৮ সালে এই প্রক্রিয়া শুরু করে।” ১৯৯৯ সালে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক আফগানিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার জন্য একটি প্রতিনিধি দল সেখানে পাঠায়। এবং ২০০০ সালে, পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত [তৎকালীন তালিবান নেতা] মোল্লা ওমরের সাথে দেখা করেন।"
উইঘুর জঙ্গি দমন
রবার্টস বলেন, ঐ বৈঠকেদুই পক্ষ আফগানিস্তানে তালিবান সরকারকে টেলিযোগাযোগ এবং চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জিনজিয়াং উইঘুরের রাজধানী উরুমকি এবং কাবুলের মধ্যে একটি ফ্লাইট রুট খুলতে সুযোগ তৈরি করে দেয়।ঐ অঞ্চলে অধিকাংশ জনসংখ্যা মুসলিম এবং আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডরের সাথে চীনের ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দীর্ঘ সীমানা রয়েছে।
রবার্টস ভিওএকে বলেন,"এবং চীনের ঐ রাজ্য অনুরোধ করেছিল যে তালিবানরা তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী এমন কিছু করতে পারে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে আফগানিস্তানে উইঘুর জঙ্গি গোষ্ঠী নেই যা চীনের জন্য হুমকি।" তিনি বলেন, তালিবান কমবেশি নিশ্চিত করেছিল যে চীন থেকে বিদ্রোহী উইঘুরদের ছোট একটি দল যারা ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি গঠন করে, যা ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) নামেও পরিচিত, সেই সময় থেকে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তামা প্রকল্প
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন সিনিয়র ফেলো এবং লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়রসহযোগী রাফায়েলোপ্যান্টুচি ভিওএকে বলেন, ২০০৭ সালে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি কাবুল থেকে প্রায় ২০ মাইল(৪০কিলোমিটার)দক্ষিণ পূর্বে মেস আয়নাকের একটি তামার খনির ২৮০ কোটি ডলারের চুক্তি পাওয়ার পর চীনেরতালিবান বিরোধী মনোভাব পরিবর্তন হয়।
প্যান্টুচির মতে,তারপর, বেইজিং আফগান সরকারের পাশাপাশি আফগান সরকারেরই একটি উপদল হিসেবে ধীরে ধীরে তালিবানদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করে। চীন উভয় পক্ষের সাথে তাদের সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে, দেখার জন্য যে উভয়ের মধ্যে কে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে এবং বর্তমানে তারই ফল হিসেবে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে যারা রয়েছে তাদের প্রতিই চীনের সমর্থন দেখতে পাচ্ছি আমরা।
চীনের জন্য দুটি প্রধান বিষয়
পাকিস্তানের সেনেট ডিফেন্স অ্যান্ড ডিফেন্স প্রোডাকশন কমিটির চেয়ারম্যান মুশাহিদ হুসেইন সৈয়দ ভিওএকে বলেন, যখন আফগানিস্তানের কথা আসে তখন চীনের দুটি বিষয় রয়েছে যা চীন ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
"প্রথমত, আফগানিস্তানেরভূমিকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা উচিত নয়।দ্বিতীয়ত, যখন একটি নতুন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবেকাবুলে তালিবানের প্রতিনিধিত্ব করবে, তখন তারা চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশীদার হতে চাইবে কিনা তা এখনও স্পষ্টনয়, যার মধ্যে CPEC[চীন- পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর] একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।"