অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, বেড়েছে বাল্যবিয়ে


বাংলাদেশে একটি স্কুলের ক্লাসরুম পরিষ্কার করা হচ্ছে। ছবি-জয়ীতা রায়
বাংলাদেশে একটি স্কুলের ক্লাসরুম পরিষ্কার করা হচ্ছে। ছবি-জয়ীতা রায়

কুমিল্লা নাঙ্গলকোটের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবদুল মতিন।ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, করোনার আগে তার কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। ছাত্রীর সংখ্যাই ছিল ছাত্রদের তুলনায় অনেক বেশি। গ্রামের মেয়েরা বেশি করে আসত স্কুল কলেজে। কিন্তু সবকিছু বদলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ফরম পূরণ করতে গিয়ে তিনি দেখেন শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১১০ জন। বাকিরা আসছে না। কেন আসছে না খোঁজ নিতে শুরু করেন অধ্যক্ষ। খবর নিয়ে জানেন, শতাধিক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছাত্ররা কেউ কৃষি কাজে, কেউ বিভিন্ন স্থানে চাকরি নিয়ে চলে গেছে। তারা পরীক্ষা দেবে না, ফরম পূরণ করবে না। এই নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অধ্যক্ষ মতিন। অভিভাবকরা সাফ জানিয়ে দেন তাদের সন্তানরা কলেজে আর যাবে না।

শুধু নাঙ্গলকোটের একটি প্রতিষ্ঠান নয়, পুরো উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। কোভিডের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে আগামী রবিবার।কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা করোনার পূর্ববর্তী সময়ের মতো ক্লাসে ফিরবে কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই শিক্ষকদের।করোনাকাল বদলে দিয়েছে গ্রাম গঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। তারপরও সবকিছু সামাল দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা।ক্লাস রুমগুলোকে আগের অবস্থানে নিতে কাজ করছে কর্মচারীরা। শিক্ষকরা সবকিছু মনিটর করছেন। অধ্যক্ষ আবদুল মতিন বলেন, শিক্ষকদের ছাত্র ছাত্রীদের বাড়ি পাঠাচ্ছেন, খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। কিন্তু হতাশাজনক চিত্রই দেখছেন তারা।

সারা দেশেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। সাতক্ষীরার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। স্কুল বন্ধের পর অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর এই ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ মিডিয়াকে বলেছেন, বিয়ে করা মেয়েদের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর। তিনি জানান, তার স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮ জন। তিনি দেখতে পান ৪৭ জন ফরম পূরণ করেছে। বাকি ২১ জন আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই মেয়েদের গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেন। অভিভাবকরা বলেন, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা আর পড়বে না। হতাশ হয়ে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি জানান শিক্ষা কর্তৃপক্ষকে।

শুধু জেলা উপজেলা নয়, কর্ম হারিয়ে অনেক অভিভাবক রাজধানী ছেড়েছে। সেই পরিবারগুলো এখন বসবাস করছে গ্রামগঞ্জে। এক সময় শহরে পড়ত তাদের সন্তানরা। এখনো তারা ভর্তি হয়নি কোথায়ও। রবিবার খোলার পর অনেক কঠিন বাস্তবতা বেরিয়ে আসবে। শহর ও গ্রামের সার্বিক চিত্র তখনই জানা যাবে পুরোপুরি।

XS
SM
MD
LG