প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক অংশুমান কর স্মৃতিকাতর হয়ে জানান, কলকাতা বইমেলা “আলো করে” থাকত বাংলাদেশের স্টল। এই স্টলগুলি থেকে “পছন্দের ও বেশ কিছু কাজের বই” কিনতেন তিনি। তার মতে, কলেজ স্ট্রিটে বাংলাদেশের বই সারা বছর পাওয়া গেলেও বইমেলায় এই প্যাভিলিয়নের একটা আলাদা মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব ছিল। অংশুমান কর গোটা বিষয়কে “দুর্ভাগ্যজনক” আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতি বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশি বই সংগ্রহ করতে উপস্থিত হন সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রসূন মজুমদার বা মনোজ্ঞ পাঠক পঙ্কজ চক্রবর্তীর মতো বাঙালিরা। কলকাতায় হুমায়ূন আহমেদ, তসলিমা নাসরিন, জাফর ইকবাল, আনিসুজ্জামান, সেলিনা হোসেন, হাসান আজিজুল হকের বইয়ের কদরে ঘাটতি নেই।
এ বছরের আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থাকছে না বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ৪৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
১৯৭৬ সাল থেকে এই বইমেলা শুরু হলেও ১৯৯৬ সাল থেকে এই বইমেলায় বিশেষ প্যাভিলিয়ন থাকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের। কোভিড ও ময়দান সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কয়েকবার বইমেলা আয়োজিত হয়নি; তা ছাড়া প্রতিবছরই বাংলাদেশ তাদের বিশাল বইয়ের সম্ভার নিয়ে পৃথক প্যাভিলিয়ন "আলো করে" থাকে। তবে, এবার চিত্রটা ভিন্ন।
এ বছর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থাকছে না। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কবি, লেখক, প্রকাশক ও আপামর বইপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও চাপান-উতোর চলছে।
গত বছর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় এবং বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনার পর দুই প্রতিবেশি দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
আয়োজকরা বলছেন, "ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের কাছে আবেদনপত্র আসেনি"
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এ বছর বাংলাদেশে কেন থাকছে না তা নিয়ে গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যথাযথ জায়গা থেকে আমাদের কাছে আবেদনপত্র আসেনি, তাই আগ বাড়িয়ে আমরা বাংলাদেশকে স্থান দিতে পারিনি; দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, আমরা নিজেরাও খুব বেদনাহত রয়েছি।"
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। বাংলাদেশ না আসতে পারায় গিল্ড কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন ও দুঃখিত। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জটিলতার কারণেই বাংলাদেশ এবার অনুপস্থিত, এমনটাি বলছে কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় এ বছর বাংলাদেশে কেন থাকছে না তা নিয়ে গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যথাযথ জায়গা থেকে আমাদের কাছে আবেদনপত্র আসেনি, তাই আগ বাড়িয়ে আমরা বাংলাদেশকে স্থান দিতে পারিনি; দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, আমরা নিজেরাও খুব বেদনাহত রয়েছি।" তিনি এই পরিস্থিতিকে “অদ্ভুত” বলে অভিহিত করেছেন।
গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে-ও “উদ্ভুত পরিস্থিতি”কেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে এবং এ বিষয়টি সবাই অবগত। নতুন করে ব্যাখ্যা করা নিষ্প্রয়োজন।" পাশাপাশি তিনি জানান, বাংলাদেশে বইমেলা করার কথা ভেবেছিলেন তারা, তবে তা ভেস্তে গেছে। কী কারণে এই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত তিনি বলেননি।
দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি ও পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাডেমির সভাপতি সুবোধ সরকার বলেন, “আমি যতদূর জানি, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় ভারতের বাইরে থেকে যে সব প্রকাশক আসেন তাদের পররাষ্ট্র দফতরের একটা ছাড়পত্র দরকার হয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ সরকারিভাবে এই প্রক্রিয়াটা চলে। ভারত সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে তারা গিল্ডের কাছে আবেদনপত্র পাঠান। সেইভাবে গিল্ড সেগুলিকে গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক বিষয়ের ক্ষেত্রে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরই সিদ্ধান্ত নেয়। এইভাবে বাংলাদেশ এতদিন আবেদন করে এসেছে।”
তিনি আরও জানান, “এ বছর বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন থেকে কোনওরকম চিঠি আসেনি। বাংলাদেশ থেকে কোনও চিঠি ওদের মাধ্যমে এসে পৌঁছায়নি। ভারত সরকারের কাছ থেকেও সুপারিশ আসেনি। তাতে গিল্ড কী করতে পারে?”
"ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি"
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, “আমি যতটুকু জানি কলকাতা এবার তাদের বই মেলায় বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। আমি এটা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে, আমি এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনও চিঠি পায়নি।”
এই বিষয়ে জানতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলে প্রতিবারই ব্যক্তিগত সহকারী মামুন তা রিসিভ করেন। কলকাতার বই মেলায় বাংলাদেশের অংশ নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি যতটুকু জানি কলকাতা এবার তাদের বই মেলায় বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। আমি এটা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তবে, আমি এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনও চিঠি পায়নি।”
কলকাতা বইমেলায় গত বছর ৩ হাজার ফুটের বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। সেখানে অংশ নেয় ৪৫টি বাংলাদেশি প্রকাশনা সংস্থা।
আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গণি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি যতটুকু কলকাতার বইমেলার কর্তৃপক্ষ তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি নেই- এমন কারণ দেখিয়ে এবার বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি।”
ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে
পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সার্বক্ষণিক কর্মী ও অধ্যাপক সেলের নেতা মনোজিৎ মণ্ডল এই ঘটনার জন্য মমতা ব্যানার্জির সরকারকে দায়ী করতে নারাজ। তিনি দায় ঠেলেছেন কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র দফতরের দিকে। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের তরফ থেকে নিশ্চয়ই কোনও সবুজ সংকেত মেলেনি, তাই এমনটা ঘটেছে।
তার কথায়, “বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চান। কিন্তু কিছু কট্টরবাদী প্রতিটি দেশেই থাকে। তারা বিদ্বেষমূলক জিগির তোলে।”
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কেন প্যাভিলিয়ন থাকছে না, এর জবাব বাংলাদেশ দিতে পারে। ভারত কোনও অবস্থাতেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি চায় না।”
তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিগ্রহ ও ভারত-বিদ্বেষের কথা তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সেই দেশকে প্যাভিলিয়নের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভট্টাচার্য। জেলা বইমেলাগুলিতে বাংলাদেশি বই বিক্রি নিয়ে অশান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, কিছু প্রতিক্রিয়া তো হবেই।
বাংলাদেশের বই কলকাতায় সারা বছর অনায়াসেই পাওয়া যায়
কলকাতার খ্যাতনামা প্রকাশন সংস্থা দে’জে পাবলিশিং-এর কর্ণধার অপু দে বলেন, “বাংলাদেশ আসছে না মানে সে দেশের বই পাওয়া যাবে না, এমনটা নয়।
বাংলাদেশের বই এখন কলকাতার বইয়ের দোকানগুলোতে সারা বছর পাওয়া যায়।
কলকাতার খ্যাতনামা প্রকাশন সংস্থা দে’জে পাবলিশিং-এর কর্ণধার অপু দে বলেন, “বাংলাদেশ আসছে না মানে সে দেশের বই পাওয়া যাবে না, এমনটা নয়। তবে, হ্যাঁ, বইমেলায় তাদের একটা বড় প্যাভিলিয়ন হয়, সেখানে আমরা অনেক বই আমরা একসঙ্গে দেখতে পাই। সেটা এই মুহূর্তে হয়ে উঠবে না। তবে, বাংলাদেশের বই কলেজ স্ট্রিট বইপাড়াতে অনেকটাই সহজলভ্য।”
পাশাপাশি তার অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের বই বরং বাংলাদেশে তেমন সহজলভ্য নয়। বাংলাদেশের মেলাতে এ দেশের প্রকাশকরা সেভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তা ছাড়া, কলকাতার কোনও বই বাংলাদেশে গেলে তার উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হয়। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, “এখানকার ১০০ টাকার বই বাংলাদেশে গেলে তার দাম রাখা হয় প্রায় ২০০ টাকা। এখানে এই বাড়তি শুল্ক চাপানো হয় না।” তিনি দুই দেশকে বইয়ের উপর থেকে যাবতীয় “নিষেধাজ্ঞা” তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, দু'দেশের বই নিয়ে প্রতিযোগিতার বিষয়টিকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কলকাতার বাইরে বাংলাদেশের বই বিক্রি নিয়ে এরই মধ্যে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা
আন্তর্জাতিক বইমেলার আগে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই মেলাগুলিতে বাংলাদেশের বই বিক্রি নিয়ে অপ্রীতিকর ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কলকাতার নবজাতক প্রকাশনের কর্ণধার বুলবুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রিতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
তারই প্রেক্ষিতে, অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতেও কি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে? অভিযান পাবলিশার্সের কর্ণধার মারুফ হোসেন জানান, “কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশের বই বিক্রি করলে কী ঘটবে তা আগে থেকে বলা কঠিন। যদি কোনও গোলযোগ ঘটে তাহলে সেটা আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ও প্রশাসনের ব্যর্থতা বলে ধরে নিতে হবে।” হোসেন বাংলাদেশের অনেক লেখকের বইয়ের ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছেন এবং তিনি ঢাকার বইয়ের ডিস্ট্রিবিউটরও বটে।
এবারে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন না থাকায় আক্ষেপ দুই বাংলাতেই
বাংলাদেশের তরুণ জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি যতবার কলকাতায় গিয়েছি, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে মধ্যে আমাকে বসতে দেওয়ার মতো অবস্থা থাকতো না। পাঠকের এই রকম চাপ পড়তো।
বাংলাদেশের তরুণ জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমি যতবার কলকাতায় গিয়েছি, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে মধ্যে আমাকে বসতে দেওয়ার মতো অবস্থা থাকতো না। পাঠকের এই রকম চাপ পড়তো। শেষ পর্যন্ত কলকাতার মেলা কর্তৃপক্ষ আমাকে বাইরে বসার ব্যবস্থা করে দিতো। কারণ পাঠকের দীর্ঘ লাইন হয় আমার বইয়ের জন্য। একজন লেখক হিসেবে যখন আপনি পাঠকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছেন, পাঠক আপনার লেখা প্রচণ্ড ভালোবাসা নিয়ে গ্রহণ করছে, সেটা লেখকের বিশাল প্রাপ্তি। সেটা যখন সীমানা পেরিয়ে হয়, তখন লেখককে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে।”
“সেই জায়গা থেকে এবার কলকাতার বই মেলায় বাংলাদেশের অংশ নিতে না পারা, আমাদের না যেতে পারাকে আমি অনেক বেশি অনুভব করবো” বলে উল্লেখ করেন এই তরুণ লেখক।
তিনি আরও বলেন, “একজন লেখক হিসেবে আমার মনে হয়, অহিংস্র ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। যখন বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা চলতেছে, তখন লেখকদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন থাকা জরুরি। সাধারণ মানুষ তো এতো রাজনীতি বোঝে না।”
পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমির কর্মী, শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ও একাধিক গ্রন্থপ্রণেতা অর্ণব সাহা বলেছেন, তাঁদের মতো পাঠকরা বাংলাদেশি প্যাভিলিয়নের দিকে তাকিয়ে থাকেন সারা বছর কারণ সেখানে “অসাধারণ ও চমৎকার” সব বই পাওয়া যায়। তাই বইমেলায় এই প্যাভিলিয়নের জন্য গভীর আগ্রহ ও অধীর অপেক্ষা থাকে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের না আসা দুর্ভাগ্যজনক।"
পাশাপাশি সাহা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার মোহরকুঞ্জে বাংলাদেশ বইমেলা হয়, কিন্তু গত বছর সেই মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণেই এবং চলতি বছরে তা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তবে, তার মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থাকার ফলে বাংলাদেশ থেকে কী বই প্রকাশিত হচ্ছে তার সমস্ত খবর পাওয়া যায় এবং কলকাতায় এমন কিছু প্রকাশক ও ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছেন যাঁরা সেখানকার বই এনে দেন।
অভিযান পাবলিশার্সের কর্ণধার মারুফ হোসেন বলছেন, “কলকাতার পাঠক গ্রন্থপ্রেমী হিসেবে আমরা এ বছর বাংলাদেশের বইকে ‘মিস’ করব। এটা আমাদের জন্য একটা ক্ষতি।”
অভিযান পাবলিশার্সের মারুফ হোসেন বলছেন, “কলকাতার পাঠক গ্রন্থপ্রেমী হিসেবে আমরা এ বছর বাংলাদেশের বইকে ‘মিস’ করব। এটা আমাদের জন্য একটা ক্ষতি।” তার মতে, দুই দেশের রাষ্ট্রনেতাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ব্যর্থতার কারণে ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের। এই ব্যর্থতার জন্য তিনি সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রনেতাদের দায়ী করেছেন।
কলকাতার আরম্ভ পাবলিশার্সের কর্ণধার ও একটি বাণিজ্যিক পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক লালন বাহারও প্রায় সমজাতীয় কথা বলেছেন। বাহারও মনে করেন, বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন না থাকা একটা বড় “ক্ষতি।” পশ্চিমবঙ্গের বহু বইপ্রেমী ও সাধারণ পাঠক ওপার বাংলার বইয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবেন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা অস্থিরতা কারণে দুই দেশের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা অনেকটা হ্রাস পেত যদি এখানে বাংলাদেশের বই প্রদর্শিত হত, এমনটাই মনে করেন বাহার। পাশাপাশি, বই নিয়ে প্রতিযোগিতার বিষয়কে নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের জন্য নির্ধারিত জায়গাটি এ বছর ফাঁকা থাকবে
কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় যেখানে প্রতি বছর বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়, সেই জায়গাটি এ বছর ফাঁকা থাকবে বলে জানিয়েছেন বুলবুল ইসলাম। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে বাংলাদেশকে আবার প্যাভিলিয়ন তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তখন যাতে স্থান-সংকুলান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্যই পরিসরটি উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ অবশ্যই আসবে।
এ বছর ‘থিম কান্ট্রি’ জার্মানি। বাংলাদেশও তিনবার থিম দেশ হওয়ার সম্মান লাভ করেছে যথাক্রমে ১৯৯৯, ২০১৩ ও ২০২২ সালে। যুক্তরাষ্ট্রকে থিম কান্ট্রি করা হয়েছিল ২০০৮ সালে, তবে সেবার মেলা স্থগিত হয়ে যায়। ২০১১ সালে আবার যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন আদিত্য রিমন।)