ঢাকায় ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘিরে দায়ের করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ২৫০ জনের বেশি আসামিকে জামিন দিয়েছে আদালত।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের বিচারক ইব্রাহীম মিয়া এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্র পক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলে ঢাকার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানায়।
জামিনের আদেশ ব্যাখ্যা করে চিফ প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন খান সাংবাদিকদের জানান, "যারা আগে খালাসপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রায় পরিবর্তন হয়েছে, বা কারো বিরুদ্ধে আপিল পেন্ডিং আছে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় আলাদা ৩০ জনের মত আসামি শুধুই বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামী ছিলেন, তাদের ব্যতিরেকে অন্যান্য খালাসপ্রাপ্ত আসামীদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।”
হত্যা মামলায় যেসব আসামিরা বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন তাদের জামিন দিয়েছে আদালত।
স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বিচারিক ও উচ্চ আদালত থেকে হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া আসামির সংখ্যা ২৫০ জনের বেশি।
বিডিআর বিদ্রোহ আর হত্যাযজ্ঞ
ঢাকার পিলখানায় আধা-সামরিক বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বা বিজিবি) সদর দফতরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন দাবীতে বিদ্রোহ করে বিডিআর সদস্যরা। কিন্তু ঘটনা দ্রুত এক ব্যাপক হত্যাযজ্ঞে পরিণত হয়।
সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার কাজ হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারিক আদালত।
মামলায় ১৫২ জনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৬০ জনের। দশ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন।
আপিলের পর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর দেয়া রায়ে ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন।
উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে।
পাশাপাশি অভিযুক্ত পক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।
এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে নভেম্বরে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার।
পরবর্তী সময়ে “প্রকৃত তথ্য” বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে এবং ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর আবেদন করেন রিটকারীরা।