অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব গণতন্ত্র চায়: রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি


ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি
ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত—দুই দেশই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউআইওএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এরিক গারসেটি বলেন, "গণতন্ত্রই বাংলাদেশে নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে। এটি অতীতের বিষয় নয়, আমরা একসাথে কী করতে পারি তা নিয়ে ভাবতে হবে।"

এই প্রথম বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেছেন ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

এরিক গারসেটি বলেন, "আমরা দুই দেশই শান্তিপর্ণ, গণতান্ত্রিক দক্ষিণ এশিয়া দেখতে চাই। এই নীতিতে একমত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এই নীতির ভাগিদার।

এ ক্ষেত্রে দুই দেশ সমন্বয় করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি বলেন, "আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো দেশই হোক না কেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা উচিত না। আমরা মনে করি, আমাদের একটি সুযোগ আছে।"

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কথিত 'নিষ্ক্রিয়তা'র অভিযোগের ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে দেখছে, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার করা এ প্রশ্নের জবাবে এক ইমেইলে ৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, বাংলাদেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া অব্যাহত পদক্ষেপগুলো কে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

মুখপাত্র জানান, "আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের উপর সহিংসতা ও তাদের প্রতি অসহিষ্ণুতার যেকোন ঘটনার নিন্দা জানাই এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া অব্যাহত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই।"

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের যে ঘটনাগুলো ঘটছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এ ইমেইল বার্তায় ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে জানানো হয়, "যুক্তরাষ্ট্র ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন (করার স্বাধীনতাকে) মৌলিক স্বাধীনতা হিসেবে সমর্থন করে। আমরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারসহ আমাদের সকল অংশীদারদের কাছে সেই সমর্থনের কথা জানাই।"

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ৩ ডিসেম্বর বলেন, "যেসব দেশের সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান একই রকম—মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা স্পষ্ট করে বলি।"

বেদান্ত প্যাটেল আরও বলেন, "যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হতে হবে। যেকোনো ধরনের ধরপাকড়ের ক্ষেত্রে সরকারকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে দেশগুলোর প্রতি জোর দিয়ে যাবে।"

ফাইল ছবিঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ফাইল ছবিঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচানের প্রচারণার সময়, ডনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম এক্স ও ট্রুথ সোশ্যাল-এ অক্টোবর ৩১-এ এক পোস্টে লেখেন, "আমি হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই যারা বাংলাদেশে মব দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে, দেশটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে।"

তিনি পোস্টে হিন্দুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সমালোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ২৬ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের এক বিরতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

ঐ সাক্ষাৎ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, দুই নেতা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, দুর্নীতি রোধ, শ্রম অধিকারের প্রতি সম্মান এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যসহ বাংলাদেশের সকলের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

২০ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দেয় যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটি। চিঠিতে আইনপ্রণেতারা দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ 'দুর্বল' সম্প্রদায়ের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া ও কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সেনেটররা তাদের চিঠিতে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে উল্লেখ করে, উদযাপনের সময়টাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সহিংসতার ব্যাপারে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যেখানে পুলিশ, সংখ্যালঘু হিন্দু এবং যাদেরকে শেখ হাসিনার সরকারের সমর্থক বলে ধরে নেয়া হয় তাদেরকে সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ও সহিংসতার যে ঘটনাগুলো প্রচার হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত।

XS
SM
MD
LG