বাংলাদেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী মারা গেছেন। মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র বলেছে, "এইচএমপিভির একটা কেসই আমরা এ বছর পেয়েছি। এই রোগী বুধবার সন্ধ্যায় মারা যান। শুধু এইচএমপিভির কারণে মারা গেছেন, তা মনে হচ্ছে না।
এর সঙ্গে আরও একটি অর্গানিজম পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, তার অনেকগুলো জটিলতা ছিল। শুধু এইচএমপিভি ভাইরাসের কারণে তিনি মারা গেছেন এমনটি বলা যাবে না। এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।"
রবিবার (১২ জানুয়ারি) রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছিল, ওই ভাইরাসে একজন নারী আক্রান্ত হয়েছেন। তার নাম সানজিদা আক্তার। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস–এ প্রতিবছরই দু-চারজন রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন।
চীনের উত্তরাঞ্চলে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে এতে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষায় নাগরিকদের পূর্বসতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (সিডিসি)।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিয়াং বলেন, "শীত মৌসুমে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগটির সংক্রমণ বেশি ঘটে। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কমই ছড়িয়েছে।"
ক্রমাগত রূপান্তরে এইচএমপিভি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে: ডা. সায়েদুর রহমান
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে সাধারণত মৃত্যু হয় না, কিন্তু ক্রমাগত রূপান্তর ঘটে এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হয়ে সানজিদা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যুর পর এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সায়েদুর রহমান জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন সানজিদা। প্রথমে নিজ বাসার আশেপাশেই চিকিৎসা নেন তিনি। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন।
তিনি বলেন, “বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে বলা যায়, এইচএমপিভির কারণে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল। তিনি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং পরবর্তীতে তার মাল্টিঅর্গান ফেইলর হয়। এ ছাড়া, তার স্থূলতা ছিল, থাইরয়েড ডিসফাংশনও ছিল। নিউমোনিয়া ও মাল্টিঅর্গান ফেইলরের কারণেই সানজিদার মৃত্যু হয়েছে। এসবের সঙ্গে রোগী দুর্ভাগ্যজনকভাবে এইচএমপি ভাইরাসেও আক্রান্ত ছিলেন।”
“এই ভাইরাসে সাধারণত মৃত্যু হয় না। মৃত্যু হচ্ছেও না। আশপাশের দেশে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর স্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু গাইডলাইন আছে,” যোগ করেন তিনি।
সায়েদুর রহমান বলেন, “এ সময়ে যদি কেউ ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তিনি যেন জনসম্মুখে না আসেন। এলেও মাস্ক পরতে হবে। আবার কেউ অসুস্থবোধ করলে তিনি যেন ঘরে থাকেন।”
অসুস্থ হলে হাত ধোয়া ও জনসম্মুখে মাস্ক পরলে এইচএমপি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “ভাইরাসের যখন বিস্তার হতে থাকে, তখন সেটার প্রতিনিয়ত মিউটেশন বা রূপান্তর হতে থাকে। কোভিড-১৯ ভাইরাসও অনেক পুরোনো ভাইরাস ছিল। মিউটেশনের কারণে এটাও (এইচএমপিভি) ক্ষতিকর বা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই এই ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা দরকার।”
এখনো দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, “তবে কেউ যদি ফ্লুতে আক্রান্ত হন, তিনি যেন সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে কম আসেন। অসুস্থ হলে তিনি যেন ঘরে থাকেন।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, আইসিডিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।