ভারত এবং তালিবান নেতৃত্বের মধ্যে প্রথম উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে দেশ দুটি সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ। কৌশলগত কারণেই তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ছে।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে আফগানিস্তানের গুরুত্ব ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের সাথে তালিবানের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, ভারতের সাথে তালিবানের যোগাযোগ আরও দৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত সপ্তাহে দুবাইতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং তালিবানের কার্যনির্বাহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ভারত "নিকট ভবিষ্যতে" আফগানিস্তানে উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে জড়িত হওয়ার এবং স্বাস্থ্য খাত ও শরণার্থী পুনর্বাসনে আরও সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
দুই পক্ষই বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা করেছে।
ভারতকে একটি "গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক এবং অর্থনৈতিক অংশীদার" বলে উল্লেখ করে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, "আমরা ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে চাই।"
২০২১ সালে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের পর একটি বড় পরিবর্তন নির্দেশ করছে এই বৈঠক ।
ভারতের কাবুলের সঙ্গে দুই দশকের সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা হিসেবে এসেছিল তালিবানের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া।
উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ভয়েস অফ আমেরিকাকে ইমেইলে মন্তব্য করেছেন, "নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি একটি বাস্তবসম্মত, এই দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে যে তালেবানকে বিচ্ছিন্ন করা আফগানিস্তানে তাদের লক্ষ্য অর্জন করা আরও কঠিন করে তুলবে।
উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ভিওএ-কে ইমেইল মন্তব্যে বলেছেন, "নয়াদিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবসম্মত। কারণ এটা সত্যি যে, তালিবানকে বিচ্ছিন্ন রাখলে আফগানিস্তানে ভারতের লক্ষ্য পূরণ আরও কঠিন হয়ে উঠবে।"
তালিবানের প্রত্যাবর্তন নয়াদিল্লির আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছিল। ভারতের ধারণা, আফগানিস্তান পাকিস্তানি জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে।
এই জঙ্গিরা তিন দশক ধরে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সহিংস বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের পরিপন্থী কোন কাজ না করে নয়াদিল্লির মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে নতুন তালিবান নেতৃত্ব।
২০২২ সালে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে খাদ্য ও ওষুধ পাঠানো শুরু করে ভারত। একই বছর একটি ছোট "প্রযুক্তিগত দল" নিয়ে কাবুলে তার মিশন পুনরায় চালু করে দেশটি।