রবিবার সকালে গাজা ভূখণ্ডের একটি মসজিদে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। এ অঞ্চলে ইরানের মিত্র হিসেবে বিবেচিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজার উত্তর ও বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে বোমা হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে।
গাজার মধ্যাঞ্চলের শহর দেইর আল-বালাহর মূল হাসপাতালের কাছে অবস্থিত মসজিদটিতে বাস্তুচ্যুত মানুষরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, শহরের কাছে অবস্থিত বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে হামলার ঘটনায় আরও চার জনের প্রাণহানি ঘটে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, উভয় হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গিরা। তবে তারা এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার এক বছর পরও ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে নতুন রণাঙ্গনে লড়াই শুরু করেছে।
বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা
বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে বিমান হামলায় সমগ্র আকাশ প্রজ্বলিত হয় এবং পুরো অঞ্চলে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। দাহিয়েহ নামে পরিচিত এই অঞ্চলে হিজবুল্লাহর জঙ্গি কাঠামোয় রাতভর হামলা চালানোর দাবি করে ইসরায়েল।
লেবাননের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি বলছে, এই এলাকায় রাতভর ৩০ দফারও বেশি হামলা চালায় ইসরায়েল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের আকাশ হামলার অভিযান শুরুর পর এটাই লেবাননে সবচেয়ে বড় আকারের বিমান হামলা।
সংবাদ সংস্থা জানায়, হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল বৈরুতের বিমানবন্দর অভিমুখী মূল মহাসড়কের একটি গ্যাস স্টেশন এবং চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণে ব্যবহৃত একটি গুদাম। রাতের কয়েক দফা হামলায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়, যা থেকে ধারণা করা যায়, গোলাবারুদের গুদামঘর আক্রান্ত হয়েছিল।
হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলার দাবী
হিজবুল্লাহ বলছে, তারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে একদল সেনার ওপর সফল হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করে, হামলায় “অসংখ্য রকেটের ব্যবহারে তাদেরকে (ইসরায়েলি সেনাদের) নিখুঁতভাবে আঘাত করা হয়।” তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
দু’সপ্তাহেরও কম সময়ে অন্তত ১,৪০০ লেবানিজ নিহত এবং ১২ লক্ষ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সাধারণ বেসামরিক মানুষ, স্বাস্থ্য কর্মী এবং হিজবুল্লাহ যোদ্ধা রয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তারা হিজবুল্লাহকে তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে তারিয়ে দিতে চায়, যাতে হাজার হাজার বাস্তচ্যুত ইসরায়েলি তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসতে পারে।
ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গত বছর ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে গাজার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর পরই ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে। হিজবুল্লাহ এই পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি হিসেবে বর্ণনা করে।
হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিন একে অপরকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের স্থল বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে অনুপ্রবেশ করে আক্রমণ শুরু করে, যেটাকে ইসরায়েল ‘সীমিত আকারের স্থল অভিযান’ বলে বর্ণনা করছে। এর আগে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং গোষ্ঠীর বেশিরভাগ সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যা করে।
বর্তমান লড়াই ২০০৬ সালের এক মাসব্যাপী যুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্মক। ইসরায়েল দাবী করছে তারা ৪৪০জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে স্থল অভিযান শুরুর পর হত্যা করেছে এবং তাদের ৯ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।
লড়াই সম্পর্কে দুপক্ষের দাবী স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব না।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আহ্বান
রবিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আবারও ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। এই দাবির বিপরীতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
এক লিখিত বক্তব্যে ম্যাক্রোঁর কার্যালয় বলছে, তিনি (প্রেসিডেন্ট) গাজায় ব্যবহার হতে পারে এমন অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পক্ষে, কারণ “ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, জিম্মিদের মুক্তি, বেসামরিক মানুষকে সুরক্ষিত রাখা ও ইসরায়েল ও সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করতে” যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন।
ম্যাক্র এর আগেও এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। সে সময়, নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বিবৃতি প্রকাশ করে তাকে জবাব দেন। ভিডিওতে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করেন এবং এ ধরনের আহ্বানকে “লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করেন।
যুদ্ধের সম্প্রসারণের ফলে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রর জড়িয়ে যাবার ঝুঁকি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে। একই সাথে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র যেসব আরব রাষ্ট্রে আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, তাদেরও জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সিরিয়া, ইরাক আর ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দূর-পাল্লার আক্রমণের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছে।