অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ধর্ষণ আইন কঠোর করা হচ্ছে


উচ্চতর আদালতের নির্দেশে মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) সৈন্যরা এক সরকারি হাসপাতালের মধ্যে রুটিন টহল দিচ্ছেন। কলকাতা, ভারত। ফটোঃ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
উচ্চতর আদালতের নির্দেশে মোতায়েন করা কেন্দ্রীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল নিরাপত্তা বাহিনীর (সিআইএসএফ) সৈন্যরা এক সরকারি হাসপাতালের মধ্যে রুটিন টহল দিচ্ছেন। কলকাতা, ভারত। ফটোঃ ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

পশ্চিমবঙ্গে গত মাসে এক শিক্ষার্থী-চিকিৎককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার জেরে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এবার সেই রাজ্য ধর্ষণের জন্য আরও কঠোর সাজা চালু করতে চলেছে। এই সাজার মধ্যে রয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড।

তবে, এই কঠোর আইন পাশ করলেই নারীদের উপর যৌন হেনস্তা ও হয়রানি কমবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীরা।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় মঙ্গলবার সর্বসম্মতিক্রমে ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ পাশ হয়েছে। এই বিলে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির হাজতবাসের মেয়াদ ১০ বছর থেকে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, ধর্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ধর্ষণ সংক্রান্ত তদন্তের যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই বিলে।

দেশের প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পেলে এই বিল আইনে পরিণত হবে। গত মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার এক হাসপাতালে ৩১ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী-চিকিৎসকের উপর নৃশংস হামলাকে ঘিরে তীব্র বিক্ষোভের আবহে এই বিল পাশ হয়েছে। নির্মম ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। বিক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা ডাক্তারদের নিরাপত্তা ও নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে এখনও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। ওই হাসপাতালে কর্মরত একজন পুলিশ (সিভিক) ভলিন্টিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এই অপরাধের দায় তার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলেছে, নারী ও শিশুদের সুরক্ষাকে জোরদার ও তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই এই বিলের লক্ষ্য।

তবে, আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, যে দেশের বিচার ব্যবস্থা এত মন্থর সেখানে কঠোর শাস্তি দিয়ে অপরাধীদের কিছুই প্রায় করা যাবে না।

আইনজীবী ও সমাজকর্মী আভা সিং উল্লেখ করেছেন, “আইন নিয়ে তেমন ভয় নেই। এর কারণ হল, বিচার খুব কম ক্ষেত্রে রায়ে গড়ায়। ধর্ষণে সাজা ঘোষণার হার মাত্র ২৮ শতাংশের মতো।”

নারী অধিকার কর্মীরা বলেছেন, নয়াদিল্লিতে এক চলমান বাসের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী এক নারীকে গণধর্ষণ করে হত্যার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র সরকার ফৌজদারি আইনি ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল।

তবে, পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নারীদের উপর যৌন সহিংসতার ঘটনায় ওই বদলের প্রভাব নেই বললেই চলে। ২০১২ সালে প্রায় ২৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। দশ বছর পর, অর্থাৎ ২০২২ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজারের উপরে। এমনটাই জানাচ্ছে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)।

শিক্ষার্থী-চিকিৎককে ধর্ষণ ও হত্যার পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট চিকিৎসকদের নিয়ে একটা জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে যারা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করবেন।

XS
SM
MD
LG