ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শান্তি ও স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাতের শান্তিপূর্ণ নিরসনের লক্ষ্যে তাঁর “চিন্তা-ভাবনা” নিয়ে তিনি আলাপ করবেন।
মোদী পোল্যান্ড সফর করার পর শুক্রবার ইউক্রেন যাবেন। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকির সাথে বৈঠক করবেন। মোদী কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতের দীর্ঘ দিনের মিত্র রাশিয়া সফর করার কারণে জেলেন্সকি তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
মোদী জুলাই মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে যেদিন সাক্ষাৎ করেন সেদিন রাশিয়ার এক ক্ষেপনাত্র হামলায় কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতীয় নেতা শিশুদের মৃত্যুকে হৃদয়-বিদারক বলে বর্ণনা করেন, কিন্তু মোদী এবং পুতিনের আলিঙ্গনের দৃশ্যকে বিশ্লেষকরা “বিব্রতকর” বলে অভিহিত করেছেন।
“রাশিয়া সফর ভাবমূর্তির জন্য ভাল ছিল না। সেজন্য, ইউক্রেন সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে দেখানো যে, ভারত এই সংঘাতে নীরব ভূমিকা পালন না করে সক্রিয় ভাবে তা সমাধানে সাহায্য করতে চায়,” বলছেন নয়া দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিংগুইশড ফেলো মানজ জোশি।
ভারত এবং ইউক্রেনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর মোদীই হবেন প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি কিয়েভ সফর করবেন।
“একজন বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে, আমরা শীঘ্রই এই অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রত্যাবর্তন আশা করছি,” বুধবার দিল্লি থেকে রওনা দেয়ার আগে মোদী বলেন। তিনি বলেন, এই সফর হবে ভারত এবং ইউক্রেনের মধ্যে “ব্যাপক যোগাযোগের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায়।”
জুন মাসে ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ বৈঠকের সময় মোদী জেলেন্সকির সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ’বছর মার্চ মাসে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে ভারতের রাজধানী সফর করেন।
ভারত তার পশ্চিমা মিত্রদের মত যুদ্ধের জন্য মস্কোকে সরাসরি দায়ী করে না। কিন্তু তারা দুই দেশকে আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে তাদের সংঘাত নিরসন করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার বলে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন দু’দেশের সাথেই ভারতের “গভীর এবং স্বতন্ত্র সম্পর্ক” আছে, এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি অর্জনে ভারত সাহায্য করতে প্রস্তুত।
“রাশিয়ার কাছে ভারত ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য,” বিশ্লেষক জোশি ভিওএ-কে বলেন। “কাজেই, এখানে আশা হচ্ছে ভারত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং বিষয়গুলি সরাসরি মস্কোর কাছে উপস্থাপন করতে পারবে।”
এই সফরকে একদিকে পশ্চিমা দেশেগুলোর সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক, এবং অন্যদিকে রাশিয়াকে একঘরে করার পশ্চিমা নীতিতে যোগ দিতে দিল্লির অস্বীকৃতি, এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য আনার একটি চেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
মোদী-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের পর, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আশা প্রকাশ করে যে, ভারত ক্রেমলিনকে দৃঢ় ভাবে জাতিসংঘের সনদ মেনে চলার আহ্বান জানাবে।
নয়া দিল্লির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
প্রায় আড়াই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ভারত জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিটি প্রস্তাবে ‘অনুপস্থিত’ ভোট দেয়। ভারত মস্কোর সাথে তার বাণিজ্য অব্যাহত রাখে এবং রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতাদের একজন হয়ে উঠে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নয়া দিল্লির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব এবং কিয়েভকে বোঝানো যে রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বর মানে এই না যে তারা পুতিনের ইউক্রেন নীতিকে সমর্থন করে।
“ভারত খুব সাবধানে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে,” জোশি বলেন। “যখন যুদ্ধ চলছে এবং আরও তীব্র হয়ে উঠছে, তখন ভারতের অবস্থান আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠে, বিশেষ করে যখন রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি আরও কঠোর হয়ে উঠছে।”
পোল্যান্ডে মোদীর সফর হবে ৪০ বছরে সেদেশে কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুসারে, তিনি পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড তুস্ক এবং প্রেসিডেন্ট আনদ্রে ডুডার সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলাপ করবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পোল্যান্ড এবং ইউক্রেন সফরের মাধ্যমে ভারত মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপের দেশের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক প্রোফাইল বৃদ্ধি পাবে।