ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বুধবার বলেছে, তাদের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহ ইরানে এক ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। হানিয়েহ ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার জন্য তেহরানে ছিলেন।
“ভ্রাতা, নেতা, মুজাহিদ ইসমাইল হানিয়েহ, আন্দোলনের প্রধান, তেহরানে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর, তাঁর প্রধান কার্যালয়ে এক জাওনবাদী হামলায় মারা গেছেন,” হামাস তাদের বিবৃতিতে বলে।
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড বাহিনীও তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করে। তারা জানায়, তেহরানে হানিয়েহ’র বাসা “আক্রান্তঃ হয় এবং তিনি ও তাঁর এক দেহরক্ষী নিহত হন।
“তেহরানে হামাস ইসলামিক প্রতিরোধের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ’র বাসা আক্রান্ত হয়, যার ফলে তিনি এবং তাঁর দেহরক্ষীদের একজন শাহাদাত বরন করেন,” ইসলামী রেভোলিউশনারি গার্ড-এর ওয়েবসাইট সেপাহ-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়।
হানিয়েহ মঙ্গলবার ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান-এর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য তেহরানে গিয়েছিলেন।
হানিয়েহ’র মৃত্যুর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষনিকভাবে কোন মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলের দিকে সন্দেহ
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বুধবার সকালের দিকে তাঁর মৃত্যুর খবর দেয়, এবং বিশ্লেষণকারীরা তাৎক্ষনিকভাবে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে।
ইসরায়েল নিজে তাৎক্ষনিকভাবে মন্তব্য করে নি, কিন্তু তারা সাধারণত মোসাদ গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করে না।
ইসরায়েল কয়েক বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং দেশের পারমাণবিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের হত্যা করে আসছে বলে সন্দেহ করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার এবং ৭ অক্টোবর হামলায় অপহরণ করা জিম্মিদের মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। হামাসের হামলা গাজা যুদ্ধের সূচনা করে।
হানিয়েহ এবং হামাস
হানিয়েহ ২০১৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক দফতরের প্রধান নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি তার আগেই বেশ পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ২০০৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
হানিয়েহকে মধ্যপন্থি হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং তিনি নির্বাসনে তাঁর সময় তুরস্ক আর কাতারের মধ্যে ভাগ করে নিতেন।
গাজা যুদ্ধের সময় হানিয়েহ কূটনৈতিক কাজের জন্য ইরান এবং তুরস্কে গিয়েছেন, এবং ইরান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টদের সাথে বৈঠক করেছেন।
ধারনা করা হয় হানিয়েহ হামাসের প্রতিপক্ষসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর প্রধানের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতেন।
হানিয়েহ ১৯৮৭ সালে হামাসে যোগদান করেন, যখন ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি ‘ইনতিফাদা’ বা বিদ্রোহ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ইরান ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করাকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কাজ হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রশংসা করেছে কিন্তু তার সাথে কোন সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েল ৭ অক্টোবর হামলার প্রেক্ষিতে হানিয়েহ এবং অন্যান্য হামাস নেতাদের হত্যা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল। হামাসের হামলায় ইসরায়েলের হিসেব মতে প্রায় ১,২০০জন নিহত এবং ২৫০জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩৯,৩৬০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ৯০,৯০০র বেশি আহত করেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
এই রিপোর্টে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস থেকে কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে।