রবি, সোম ও মঙ্গলবার কারফিউ শিথিলের সময় আরও দুই ঘণ্টা করে বৃদ্ধি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার (২৭ জুলাই) জানিয়েছেন, আগামী তিনদিন ঢাকায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।
শনিবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার কারফিউ অব্যহত থাকবে তবে, কারফিউ শিথিলের সময় আরও দুই ঘণ্টা করে বাড়ানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা অন্যান্য জেলায় কারফিউ সময়সীমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এসময় কারফিউ শিথিলের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "যেহেতু পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। সে জন্য আমরা আমাদের যে সান্ধ্য আইন, যাকে কারফিউ বলা হয়, সেটি আরেকটু শিথিল করতে চাচ্ছি।...খুব শিগগিরই চেষ্টা করব কারফিউ আরও শিথিল করার জন্য।"
দেশে চলমান কারফিউ শিথিল করার মাঝে ব্যাংক লেনদেনের সময়সূচিও সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার (২৮ জুলাই) থেকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
শনিবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ জুলাই সরকারি অফিস সময়সূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তফসিলি ব্যাংকগুলো তাদের অফিস সময়সূচি সমন্বয় করবে। ব্যাংকগুলো তাদের দাপ্তরিক কাজ শেষ করে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে বন্ধ করে দেবে।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)
শনিবার সারাদিন
- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে বলে শনিবার জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
- শনিবার (২৭ জুলাই) নিউমার্কেট ও সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিসকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হেফাজতে নেয়া হয়।
- সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী পাঁচ সমন্বয়ককে গত দু'দিনে 'নিরাপত্তার’ সমস্যার দেখিয়ে নিজেদের ‘হেফাজতে’ নিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
- ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা, ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল।
- শনিবারও (২৭ জুলাই) ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনীকে সাঁজোয়া বহরসহ ঢাকার রাস্তায় দেখা গেছে।
- শনিবার (২৭ জুলাই) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সরকারকে তিনটি দাবী নিয়ে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। দাবী মানা না হলে জোরালো কর্মসূচী দেয়া হবে।
- দেশব্যাপী চলমান বিক্ষোভের সময় নৃশংস হামলায় আহত ব্যক্তিদের সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৭ জুলাই) নগরীর পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় তাদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
- শিগগিরই নরসিংদী কারাগার সংস্কার করে বন্দিদের বসবাসযোগ্য করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম।
- ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন দ্রুত চালু করতে জাপানের সহযোগিতা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
- বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ফোর-জি চালুর জন্য রবিবার (২৮ জুলাই) মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হেফাজতে’ ৫ সমন্বয়ক, অন্যরা আতঙ্কে
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী পাঁচ সমন্বয়ককে গত ২ দিনে 'নিরাপত্তার’ সমস্যার দেখিয়ে নিজেদের ‘হেফাজতে’ নিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শনিবার (২৭ জুলাই) নিউমার্কেট ও সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিসকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হেফাজতে নেয়া হয়।
কয়েক ঘন্টা পরে রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, “তাদের ব্যক্তিগত ‘নিরাপত্তা’ (নিশ্চিত করতে) ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে এই দুই সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
এর আগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে আরও তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এই তিনজনের বিষয়ে শনিবার ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "তিন জনের মধ্যে একজন তার বাবাকে ফোনে বলেছেন, “আমি আত্মগোপনে রয়েছি নিরাপদে থাকার জন্য”। সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা এরকম খবর প্রচার করেছে। এরকম খবর পেয়ে তাদেরকে সেফ কাস্টোডিতে নিয়েছি।”
মন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, কারা তাদের আক্রমণ করতে চায়। এসব জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিদ্ধান্ত নেবো তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।”
হেফাজতে আছেন এমন এক সমন্বয়কের এক নিকট আত্মীয় নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “তাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কখনও নিরাপত্তা চাওয়া হয়নি। পুলিশ ও সরকার নিজ থেকে সমন্বয়কদের নিরাপত্তার দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছে।”
আন্দোলনকারী এই পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি পুলিশ হেফাজতে নেয়ার ঘটনায় অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে, তারা নিজের স্থান পরিবর্তন করছেন ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক সমন্বয়ক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে নেওয়ার পর কি ধরণের আচরণ করে তা বাংলাদেশের মানুষরা জানেন। এর আগে নাহিদকে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল,তা বিশ্ববাসী দেখেছে। তাই নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছি।”
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে ডিবি হেফাজতে নেওয়া তিন সমন্বয়কের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার মিন্টু রোড়ে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে যান বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক। শনিবার বিকালে শিক্ষকরা দেখা গেলে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও সাঈদ ফেরদৌস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অলিউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অরণি সেমন্তি খান ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার তামান্না মাকসুদ।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘"আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রকে হাসপাতাল থেকে অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ডিবির হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাঁদের এখানে আনা হলো কেন, শুধু এটা জানতেই আমরা এসেছিলাম। তখন এখানকার অফিস প্রধান ভেতরেই ছিলেন এবং তাঁকে খবরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি।’
চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কোনও বিষয় থাকলে পরিবারের কাছে না দিয়ে কেন ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষকরা বলেন, এতে তিন শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাদেরকে দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান শিক্ষকরা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন
এবার সরকারকে তিনটি দাবী নিয়ে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
শনিবার (২৭ জুলাই) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয় আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার ও সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ।
দাবিগুলো হলো-
১. কোটা পদ্ধতির সংস্কারে কমিশন গঠন এবং সংসদ কর্তৃক আইন প্রণয়ন।
২. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারী ও সংগঠকদের মুক্তি এবং দায়ের করা সকল 'মিথ্যা মামলা' প্রত্যাহার।
৩.সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত যারা সহিংসতার জন্য দায়ী তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা।
দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা।
তারা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রবিবার সারা দেশে গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন কর্মসূচি পালন করা হবে।