‘অপরাধী’ ধরতে গভীর রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’ অব্যাহত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত কয়েকে দিনে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
‘ব্লক রেইড’নামের এই অভিযানে শিক্ষার্থী,সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও বিরোধী দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। এই ‘ব্লক রেইড’ অভিযানে গত কয়েক দিনে শুধু ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ২৩৫৭ জনকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, প্রতিদিন রাত ১২ টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার অভিযানে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। ‘ব্লক রেইড’নামের এই অভিযানে যে এলাকায় যাওয়া হয়, প্রথমে সেই এলাকাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য গিয়ে সেটি ঘিরে রাখা হয়। একইসঙ্গে ওই এলাকার সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে এলাকা থেকে কেউ যেন বের হয়ে যেতে না পারে। এরপর তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই কারণে এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্লক রেইড’।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক দিনে ঢাকার বসুন্ধরা,যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, শাহীনবাগ ও মগবাজার এলাকায় ‘ব্লক রেইড’ পরিচালনা করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) লিটন কুমার সাহা স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেন, "রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতাকারীদের ধরতে আমদের অভিযান চলছে। প্রতিটি সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত না করা পর্যন্ত এ অভিযান চলবে।"
ঢাকার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো তথ্য মতে, গত ৬ দিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫৫০ টির বেশি। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারমধ্যে কয়েক'শ রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী, সাংবাদিককে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। অন্যদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আহতদের খোঁজখবর নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) জরুরি বিভাগ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিদর্শন শেষে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে দেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িতদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান বলেন, "অত্যন্ত বেদনাদায়ক অবস্থা, আজকে এতগুলো মানুষ আহত-নিহত।"
এ ধরনের জঘন্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশবাসীকে বলবো যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে, কোথায় কে আছে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, যেন আর কখনো এদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।"
"যেটা আমি কখনো চাইনি। কখনোই চাইনি এভাবে মানুষ আপনজন হারাবে, এভাবে মৃত্যুর মিছিল হবে এটা কখনো চাইনি। আজকে বাংলাদেশে সেটাই করল।"
প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
এসময় আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
(এই প্রতিবেদনের তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)
কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়ার কথা স্বীকার ডিবির
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠে শুক্রবার।
শুক্রবার(২৬ জুলাই) বেলা সাড়ে ৫ টার দিকে তাদেরকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছিল আরেক সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম।
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার তুলে নেওয়ার ৬ থেকে ৭ ঘন্টা পর স্বীকার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে স্থানীয় গণমাধ্যমকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তারা এখন ডিবি কার্যালয়ে আছেন।”
পুলিশের গুলিতে নিহত সাঈদের পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে সাত লাখ টাকার সহায়তা দেয় বেরোবি।
গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আবু সাঈদকে গুলি করে পুলিশ। ওইদিন সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কও ছিলেন।
এর আগে গত ১৮ জুলাই নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।