নরসিংদীতে সহিংসতায় ১১ মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ১৮৪: পুলিশ সুপার
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ এবং নরসিংদী কারাগার থেকে অস্ত্র লুটের ঘটনায় মোট ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেসব মামলায় ১৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান।
বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, জুয়েল ভূইয়া নামে জেল পলাতক এক জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে জেল পলাতক আরও তিন জঙ্গি সদস্য। এছাড়া এখন পর্যন্ত জেল পলাতক ৯ জঙ্গির মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৯ জুলাই হামলার সময় জেলা কারাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫টি অস্ত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৪৫টি অস্ত্র, লুট হওয়া গুলির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ৯১ রাউন্ড গুলি। ৯ জনকে গ্রেপ্তারসহ জেল পলাতক ৪৮১ কয়েদি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।
(এই প্রতিবেদনের তথ্য ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)
ঢাকায় শুক্রবার থেকে কারফিউ আরও শিথিল হচ্ছে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ঘোষণা দিয়েছেন শুক্রবার থেকে ঢাকায় কারফিউ আরও শিথিল করা হচ্ছে।
সেদিন রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।
ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে শুক্র ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা, ৯ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৭ ঘণ্টা (সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত) কারফিউ শিথিল ছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা অন্যান্য জেলায় কারফিউ সময়সীমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশে শুক্রবার (১৯ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়।
শুক্রবার বাদ জুমা মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় প্রার্থনা-গায়েবানা জানাজা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহতের স্মরণে দেশব্যাপী বাদ জুমা মসজিদ, মন্দির ও গীর্জা সহ সকল ধর্মীয় স্থানে প্রার্থনা, দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা এবং শোক মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিরীহ ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের উপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় ক্যাডারা নগ্নভাবে হামলা করে। কেবল শতশত মানুষকে শহিদ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। উপরন্তু নির্যাতিত ছাত্রসমাজের উপরই ফের গণগ্রেফতার চালিয়ে যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসকল সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে, তারাই এখন নির্যাতিত ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। পুলিশ বাদী হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হাজার-হাজার মামলা দায়ের করছে। যাকে যেখানে পাচ্ছে তাকেই গ্রেফতার করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, "আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা শতশত শহিদের রক্তের উপযুক্ত প্রতিশোধ না নিয়ে ঘরে ফিরবে না। প্রধানমন্ত্রীর জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা, দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞে দায়ী মন্ত্রীদের পদত্যাগ সহ ৯ দফা দাবী বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলনকে অব্যাহত রাখবো।"
সহিংসতা বন্ধ করে দেশে ইন্টারনেট ফেরানো ও দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের আহ্বান
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে চলা অচলাবস্থার ঘটনায় জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে ইন্টারনেট পরিষেবা ফেরানো ও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরোপুরি প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে আক্রমণ, হুমকি বা চাপ না দিয়ে ঘটনাবলিতে পূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে তারা এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকে অবশ্যই জনগণের তথ্য অধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আটক, জোরপূর্বক গুম, হত্যা বা অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের সংখ্যা পূর্ণ স্বচ্ছতা ও যথার্থতার পাশাপাশি প্রমাণের সঙ্গে সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
সতর্ক করে তারা বলেন, বিতর্কিত কোটা পদ্ধতি প্রত্যাহারে আদালতের সাম্প্রতিক রায় সঠিক পথ নির্মাণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তা যথেষ্ট হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, জনগণের আস্থা ফিরে পেতে সরকারকে দায় নিতে হবে এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে তদন্তের একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা হলেন- মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সংহতি বিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সিসিলিয়া বেইলিয়েট; গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা প্রচার বিষয়ক স্বাধীন বিশেষজ্ঞ জর্জ ক্যাটরুগালোস; বিচারবহির্ভূত, সংক্ষিপ্ত বা নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিশেষ প্রতিবেদক মরিস টিডবল-বিঞ্জ; বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত মার্গারেট স্যাটার্থওয়েট; মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান; উন্নয়নের অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক সূর্যদেব; শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদক ফরিদা শহীদ; শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক জিনা রোমেরো; মানবাধিকার রক্ষীদের পরিস্থিতির বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর; চেয়ার প্রতিবেদক আউয়া বাল্ডে; ভাইস চেয়ার গ্যাব্রিয়েলা সিট্রোনি; গ্রাসিনা বারানভস্কা এবং জোরপূর্বক বা অনিচ্ছাকৃত অন্তর্ধান সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ আনা লরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ।
গত ১৮ জুলাই দেশজুড়ে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ফলে ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েবভিত্তিক মোবাইল ফোন যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে সংবাদ পরিবেশন ও তথ্যে প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
এই সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগও বিঘ্নিত হয়েছে। কার্যত বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এরপর ২৩ জুলাই কিছু কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
(এই প্রতিবেদন ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।)