(জাতিসংঘের) লোগোটা মোছা হয়নি, ভুলে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ দাবী করেছেন সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে ভুলে জাতিসংঘের লোগো মোছা হয়নি।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে সংঘর্ষে ধ্বংসের শিকার কয়েকটি স্থান পরিদর্শন শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান।
জাতিসংঘের কোনো যান ব্যবহৃত হচ্ছে না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই যানগুলো শান্তিরক্ষা মিশনে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। ভুলে লোগো মোছা হয়নি। সেই লোগোগুলো এখন মুছে দেওয়া হয়েছে, বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার পর তাদের যানবাহন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা থেকে পাওয়া সব ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, সেনাবাহিনী কয়েকটি সাদা রঙ-এর সাঁজোয়া যান (এপিসি) নামিয়েছে যেগুলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর এপিসির মত দেখতে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র সোমবার (২২ জুলাই) অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনায় জাতিসংঘের প্রতীকসহ যানবাহন ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
“আমাদের সহকর্মীরা যানবাহনে জাতিসংঘের প্রতীক ব্যবহার করার খরব পেয়েছেন,” স্টেফান ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন। “ এ বিষয়ে যে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে এবং তা আমাদের সহকর্মীরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।”
বেশির ভাগ ছবি এবং ভিডিওতে এপিসিগুলোতে জাতিসংঘের কোন প্রতীক দেখা যায় নি, বা সৈন্যদেরও শান্তিরক্ষীদের নীল হেলমেট বা অন্য কোন ইনসিগনিয়া পরিধান করতে দেখা যায় নি।
তবে সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি ভিডিওতে একটি সাদা রঙের এপিসিতে হাল্কা ভাবে ইংরেজিতে ‘ইউ এন’ অক্ষর দুটি দৃশ্যমান ছিল। ভিডিও থেকে নেয়া এই ছবি দেখে বোঝা যায় ‘ইউ এন’ চিহ্নের উপর সাদা রঙ করা হয়েছে কিন্তু সেটা জাতিসংঘের চিহ্নকে পুরোপুরি মুছে দেয় নি।
ডুজারিক ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছেন। “জাতিসংঘের সৈন্য এবং পুলিশ দিয়ে সাহায্যকারী দেশগুলো কেবল তখনই জাতিসংঘের প্রতীক এবং সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করবে, যখন তারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বা জাতিসংঘের রাজনৈতিক মিশনের অংশ হিসাবে কাজ করবে। এবং জাতিসংঘের কোনও মিশনে মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্যতামূলক নির্দেশ পালন করবে একমাত্র তখনই”, তিনি বলেন।
আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ মিলেছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার বুধবার (২৪ জুলাই) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন তাদেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। রিফাত রশীদ একটি নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করে ছিলেন বলে জানিয়েছেন।
রিফাত ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "আমি বেচে আছি, আমি মরি নাই। আমি গুম হতে হতে অল্পের জন্যই বেচে গিয়েছিলাম। আমাকে সিনিয়ররা বলেছিলো একটা সেইফ জোনে যাও আপাতত, রাতে আমরা কানেক্টেড হয়ে আবারও আগামীকালের আন্দোলন কিভাবে কি হবে তা নিয়ে কথা বলবো। তারপর আর কোনোভাবেই কারো সাথে কানেক্ট করতে পারি নি।"
গত ১৯ জুলাই রাত ১১ টায় হাতিরঝিল মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
বুধবার (২৪ জুলাই) নিজের ফেসবুকে পেইজে এক পোস্টে এই তথ্য জানান তিনি।
আসিফ মাহমুদ পোস্টে বলেন, "আমি আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। গত ১৯ জুলাই রাত ১১ টায় আমাকে হাতিরঝিল মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। এই চার/পাঁচদিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়।"
পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, "আজ ২৪ জুলাই সকাল ১১ টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়। এখন আমি পরিবারের সাথে হাসপাতালে চিকিৎসারত আছি। এই কয়দিনে যা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করছি। কিছুটা সুস্থ হলেই সমন্বয়কদের সাথে কথা বলে আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।"
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়করা সাংবাদিকদের জানান ১৮ জুলাই থেকে সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশীদে নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদের বাবা উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিওঃ সব পক্ষকে সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বাংলাদেশে সকল পক্ষকে – সরকার, বিক্ষোভকারী এবং সাধারণ নাগরিকদের - সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহবান জানিয়েছেন।
মিলার বুধবার পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সমর্থন করে, কিন্তু সেই অধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সহিংসতার পথে যাওয়ার নিন্দা করে।
তিনি বলেন, “যারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চা করছেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করি। এবং আমরা বিক্ষোভকারীদের তরফ থেকে সহিংসতারও নিন্দা করি।”
ডেনমার্কে বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ
ডেনমার্কে বাংলাদেশি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বাসদ) বুধবার (২৪ জুলাই) ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের ক্ল্যাম্পেনবার্গে বাংলাদেশী দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।