সহিংসতার জন্য 'স্বাধীনতা-বিরোধীদের' দায়ী করে সরকারের বিবৃতি
বাংলাদেশ সরকার রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে দেশে চলমান সহিংসতা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সহযোগীরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, সরকার তা আমলে নিয়েছে। তবে সরকারের বিবৃতিতে সহিংসতার জন্য “স্বাধীনতা-বিরোধী,” “রাষ্ট্র-বিরোধী” এবং “ধর্মীয় উগ্রবাদী” গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয় সরকার আস্থাবান যে, ছাত্রদের চাহিদা এবং সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে অচলাবস্থার অবসান ঘটানো যাবে। চলমান ঘটনাবলী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
“বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন এবং সহযোগিতা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে মূল্যায়ন করি। উন্নয়নের অর্জন নিরাপদ রাখতে সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে সান্ধ্য আইন জারী এবং প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে,” বিবৃতিতে জানানো হয়।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সরবরাহ করা বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার আন্দোলনকারীদের দাবী বিবেচনা করার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছিল, বিশেষ করে জাতির উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের মাধ্যমে। সরকারি চাকুরীতে কোটা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান ছাত্রদের দাবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
“দুখের বিষয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ধৈর্য প্রদর্শনের পরও, বিএনপি-জামাতসহ স্বাধীনতা-বিরোধী, রাষ্ট্র-বিরোধী এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে তা সহিংসতার দিকে নিয়ে যায়,” বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সহিংসতা এবং মৃত্যু তদন্ত করার জন্য সরকার একজন হাই কোর্ট বিচারকের অধীনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ছাত্রদের সাথে তাদের দাবী নিয়ে আলোচনার জন্য একটি মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয় যারা শনিবার রাতে এক দফা আলোচনা করে।
কিন্তু, সরকার দাবী করে, “বিএনপি-জামায়ের নেতৃত্বে উগ্রবাদীরা” ছাত্রদের হাত থেকে আন্দোলন দখল করে এবং “হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুর সহ তাদের পুরানো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।”
“কোন উস্কানি ছাড়াই, তারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে যার মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার, জাতীয় টেলিভিশন, মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে; তারা ফায়ার ব্রিগেড এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িসহ শত শত সরকারি এবং বেসরকারি যানবাহন পুড়িয়ে দেয় এবং একটি জেলখানা ভেঙ্গে ধর্মীয় চরমপন্থি আর দাগী আসামিদের পালাতে সহায়তা করে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
বিবৃতিতে সহিংসতায় প্রাণহানির কোন পরিসংখ্যান দেয়া হয় নি, যদিও স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ১০০’র বেশি মানুষ নিহত হবার খবর দিয়েছে।
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভ
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে রবিবার বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে এবং ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ করছে।
গতকাল শনিবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিক্ষোভে অংশ নেন।
জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে রবিবার বিক্ষোভ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশেও একই ধরণের প্রতিবাদ-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে
মঙ্গলবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে নির্বাহী আদেশে রবিবার ও সোমবার ছুটি ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ সময়, সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ কাজে সংশ্লিষ্ট নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
জার্মান নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ না করার পরামর্শ
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার (২১ জুলাই) মারাত্মক নাগরিক অস্থিরতার মধ্যে জার্মান নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে।
কারফিউ এবং ইন্টারনেট এবং মোবাইল ডেটার উপর বিধিনিষেধের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে মন্ত্রণালয় তার ওয়েবসাইটে বলেছে, "বর্তমানে বাংলাদেশে ভ্রমণ না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।"
মন্ত্রণালয় বলেছে, "আরও বিধিনিষেধ এবং পরিস্থিতির অবনতি আশংকা করা হচ্ছে।"