শনিবার বিশাল নির্বাচনের শেষ ধাপে লাখ লাখ ভারতীয় ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনই নির্ধারণ করবে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন কী না।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যেই নির্বাচনের এই সপ্তম পর্বে ভোট দিচ্ছেন দেশটির ভোটাররা। দেশটিতে ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই ভোট গ্রহণ চলছে।
শনিবার যে সব আসনে ভোট গ্রহণ চলছে তার মধ্যে রয়েছে মোদির নির্বাচনী এলাকা উত্তর প্রদেশে হিন্দুদের পবিত্র শহর বারাণসী। উল্লেখ্য, হিন্দু জাতীয়তাবাদী এই নেতা গত দুটি নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।
এখন সবাই তাকিয়ে রয়েছেন মঙ্গলবারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪৩টি আসনের সবগুলোর ভোটের ফলাফলের দিকে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের এই নির্বাচনের ফল একই দিনে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৭৩ বছর বয়সী মোদি, যাকে একজন শক্তিশালী নেতা ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের জোর সমর্থক হিসেবে দেখা হয়, তার জনপ্রিয়তা যাচাই হবে এই নির্বাচনের ফলাফলে । তার এক দশকের শাসনকালে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের জন্য একাধিক কল্যাণমূলক কাজের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারণার জন্য মোদি ২০০ টিরও বেশি সমাবেশে অংশ নিতে সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন।
দলটি ৪০০ আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহজেই পাবে বলে নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে মনে করা হলেও বেশিরভাগ নির্বাচন পর্যবেক্ষক বলছেন সেটা নাও হতে পারে, যদিও অনুমান করা হচ্ছে তারা সংখ্যাগরিষ।ঠতা পাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রশিদ কিদওয়াই ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মোদির জন্য এই নির্বাচন একটি লিটমাস টেস্ট।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের শুরুতে ঘোড়দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও এসময় এসে যে দুই ডজনেরও বেশি দলের একটি বিরোধী জোট মোদীর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “ তবে জনবহুল উত্তরের রাজ্যগুলোর ফলাফলের উপর তার চূড়ান্ত অবস্থান ধরে রাখার বিষয়টি নির্ভর করবে। এই রাজ্যগুলিতে অতীতে দলটি বিপুল সাফল্য অর্জন করেছিল”।
মোদী এবং বিরোধী জোট উভয়ই জয়ের বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
বিরোধীরা দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও বিপুল যুব জনগোষ্ঠীর উচ্চ বেকারত্বের কারণে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাদের জয়লাভের আশা করছে।
বিরোধী কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী, কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা এবং দেশে ক্রমবর্ধমান সম্পদ বৈষম্যের দিকটি তুলে ধরে তার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। সরকারের নীতিগুলি দরিদ্রদের ব্যয়ে ধনীদের পক্ষে রয়েছে বলে তিনি প্রচার করেন । মোদীর অধীনে দেশটি গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণে যাচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা। পরিবর্তে, কংগ্রেস দরিদ্র নারীদের নগদ অর্থ সাহায্য এবং কলেজ স্নাতকদের জন্য শিক্ষানবিশ হবার সুযোগ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা মোদীর অধীনে দেশটি গণতান্ত্রিক মাপিকাঠিতে পিছিয়ে পড়ছে বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, মোদির নেতৃত্বে বিজেপি গত এক দশক ধরে জোরালো রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার সময়ে কংগ্রেস কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, সংসদে তাদের মাত্র ৫২ টি আসন রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা তাদের অবস্থান তুলনামূলক ভালো পর্যায়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন।
কিদওয়াইয়ের মতে, "পশ্চিমে মহারাষ্ট্র, পূর্বে বিহার এবং দক্ষিণে কর্ণাটকের মতো অস্থিতিশীল রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস পার্টি এবং তার সহযোগী অন্যান্য দলের ফলাফলের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।“
পাঞ্জাবেও শনিবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসেছিলেন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিজয়ী দল পরবর্তী সরকার গঠন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।