ইসরায়েলের বাহিনী গাজা ভূখণ্ডের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করেছে। এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, হাসপাতালের জেনারেটর ও অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানির ঘাটতি রয়েছে। ফলে গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে সংঘর্ষ হয়েছে। গাজার এই অংশে ইসরায়েলের সৈন্যরা যুদ্ধের জন্য ফিরে এসেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, হামাস এই এলাকায় পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, গাজা ও মিশর সীমান্তের কাছে রাফায় স্থল ও আকাশ পথে হামলা তীব্র করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর রবিবার বিকালে বলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের সঙ্গে টেলিফোনে “রাফায় বড় আকারে সামরিক স্থল-অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা” নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তার দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হামাসকে পরাজিত করার যৌথ লক্ষ্য” বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ব্লিংকেন। পাশাপাশি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি গ্যালান্টকে অনুরোধ করেছেন, “হামাসের ঘাঁটিগুলিকে ইসরায়েল যেহেতু লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, তাই গাজার অভ্যন্তরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও বন্টন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানে সাহায্য করা হোক।”
১৩ লক্ষ ফিলিস্তিনির মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে কয়েক মাস আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল যাতে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস জঙ্গিদের উপর হামলাকে তারা এড়াতে পারে। সেই নির্দেশের পর গাজার দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের এখন আবার অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার গাজার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল বরাবর এলাকা ও রাফার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে বলা হয়েছে এদের।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক রবিবার বলেন, চলমান সংঘর্ষ ও এলাকা খালি করার নির্দেশের ফলে “ইতোমধ্যেই গভীরভাবে যন্ত্রণাপীড়িত মানুষ ব্যাপক হারে বাস্তুচ্যুত” হয়ে পড়েছে।
তুর্ক প্রশ্ন তুলেছেন, গাজায় মানুষ কোথায় যাবে? তিনি বলেন, “কোনও নিরাপদ জায়গা নেই।”
এনবিসির “মিট দ্য প্রেস” অনুষ্ঠানে রবিবার সকালে ব্লিংকেন বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের রক্ষা বা তাদের পর্যাপ্ত মানবিক ত্রাণ দেওয়ার নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলকে রাফায় সার্বিক স্থল-অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে, কিন্তু ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আকাশপথে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে এবং সীমিতভাবে স্থল-অভিযান ও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে ৩,৫০০টি ২২৭ কিলোগ্রাম ও ৯০৭ কিলোগ্রাম ওজনের বোমার চালান স্থগিত রেখেছেন। রাফার উপর হামলায় ইসরায়েল এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে—এই উদ্বেগ থেকেই এমন স্থগিতাদেশ।
পাশাপাশি, বাইডেন গত সপ্তাহে বলেছেন, ইসরায়েল যদি রাফায় পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে তাহলে তিনি অন্যান্য আক্রমণাত্মক অস্ত্র পাঠানোও স্থগিত করবেন।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।