অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভঃ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে দু'হাজারের বেশি গ্রেফতার


পুলিশ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ইউসিএলএ) চত্বরে ছাউনি ও বেষ্টনীর একাংশ ভেঙে ফেলার পর ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ফটোঃ সকাল, ২ মে, ২০২৪।
পুলিশ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ইউসিএলএ) চত্বরে ছাউনি ও বেষ্টনীর একাংশ ভেঙে ফেলার পর ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। ফটোঃ সকাল, ২ মে, ২০২৪।

গত কয়েক সপ্তাহে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভের সময় যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ২,০০০-এর বেশি মানুষকে গ্রেফতার করেছে, বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর এক হিসেবে দেখা গেছে।

বিক্ষোভ – এবং গ্রেফতার – দেশের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ) সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে ধেয়ে আসে।

শত শত বিক্ষোভকারী মানব বন্ধন সৃষ্টি করে ইউসিএলএ ক্যাম্পাস থেকে চলে যাবার আদেশ উপেক্ষা করে। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড বা ‘ফ্ল্যাশ-ব্যাং’ ব্যবহার করে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি শেরিফের দফতর থেকে দেয়া তথ্য উদ্ধৃত করে ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে প্যাট্রলের সার্জেন্ট আলেহান্দ্রো রুবিও বলেন, অন্ততপক্ষে ২০০জন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। রুবিও জানান, তাদের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে জেলখানায় আটক রাখা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে পরের দিকে, শ্রমিকরা ব্যারিকেড এবং বিক্ষোভকারীদের তাঁবু শিবির ভেঙ্গে ফেলে। বুলডোজার দিয়ে তাঁবু এবং আবর্জনা তুলে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভবন গ্রাফিতি দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী আর পুলিশ মুখোমুখি, ইউসিএলএ, বৃহস্পতিবার সকাল। ফটোঃ ২ মে, ২০২৪।
ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী আর পুলিশ মুখোমুখি, ইউসিএলএ, বৃহস্পতিবার সকাল। ফটোঃ ২ মে, ২০২৪।

ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার

ইসরায়েলের সাথে ব্যবসা বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গাজায় যুদ্ধ সমর্থন করে, তাদের প্রতি জানিয়ে সারা দেশের ক্যাম্পাসে তাঁবু শিবির ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রদের এই আন্দোলন এই শতাব্দীতে অন্য যেকোনো আন্দোলন থেকে ভিন্ন।

গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অবসান দাবী করে ছাত্র বিক্ষোভ প্রথমে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ এপ্রিল শুরু হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে যাদের বেশির ভা নারী ও শিশু।

গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা করে ১,২০০ লোককে হত্যা এবং ২৫০জন কে জিম্মি করে নিয়ে যাবার পর যুদ্ধ শুরু হয়।

ইসরায়েল এই বিক্ষোভকে ‘ইহুদি-বিদ্বেষী’ বলে বর্ণনা করেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েল বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার জন্য এই বর্ণনা ব্যবহার করে।

যদিও কিছু সংখ্যক বিক্ষোভকারীকে ইহুদি-বিদ্বেষী মন্তব্য করতে বা হুমকি দিতে দেখা গেছে, বিক্ষোভের আয়োজকরা – যাদের মধ্যে ইহুদিও আছে – বলেছেন তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, যার লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি অধিকার রক্ষা এবং যুদ্ধের প্রতিবাদ করা।

অরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ এবং একজন বিক্ষোভকারী কথা বলছেন। ফটোঃ ২ মে, ২০২৪।
অরেগন রাজ্যের পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ এবং একজন বিক্ষোভকারী কথা বলছেন। ফটোঃ ২ মে, ২০২৪।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বক্তব্য

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ক্যাম্পাসগুলিতে চলমান ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ আমেরিকার দুটি মৌলিক নীতির পরীক্ষা নিচ্ছে আর সেগুলি হল, বাক-স্বাধীনতার অধিকার ও আইনের শাসন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, উভয় নীতিকেই বহাল রাখতে হবে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউসিএলএ) ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ শিবিরে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের হস্তক্ষেপের পর তিনি ওয়াইট হাউসে এই বক্তব্য রাখেন।

ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইউসিএলএ) বৃহস্পতিবার সকালে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ-শিবির ভেঙ্গে দেয় পুলিশ। জনতাকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ জারির পর পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।

কয়েক ঘন্টা ধরে পুলিশি কার্যকলাপ চলে। প্রথম দিকে কর্মকর্তারা বিক্ষোভ শিবিরের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিল।

ঘন্টাখানেক পর কর্মকর্তাদের একটি বড় দল ফিরে আসে। একটি প্লাজার এক প্রান্তে শত শত বিক্ষোভকারী সিঁড়ি ও পথ আটকে দাঁড়িয়ে থাকায় প্রাথমিকভাবে তারা বাধা পেয়েছিলেন।

এরপর অন্য দিক থেকে মূল বিক্ষোভ শিবিরে ঢুকে পড়ে পুলিশ। তারা দ্রুত প্লাইউড, ধাতব বেড়া ও তাঁবু ছিঁড়তে শুরু করেন।

ইসরায়েলে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি

ইসরায়েলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি করছে যে সব বিক্ষোভকারি, তারা “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ” বলে স্লোগান দেয়। এই এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরিয়ে দিতে ব্যস্ত ছিল পুলিশ। হেলমেট, ফেস শিল্ড ও লাঠি নিয়ে সজ্জিত ছিল তারা।

যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে চলমান ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভগুলির মধ্য অন্যতম ইউসিএলএ বিক্ষোভ। দেশজোড়া এই বিক্ষোভে কয়েকশো ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে।

নিউ হ্যাম্পশায়ারের পুলিশ বুধবার বিকালে ও বৃহস্পতিবার সকালে ডার্টমাউথ কলেজে অনেককে গ্রেফতার করেছে এবং একাধিক তাঁবু সরিয়ে দিয়েছে।

ডার্টমাউথে বুধবার একটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ শিবির তৈরি করা হয়েছিল। প্রশাসকরা সতর্ক করেন যে, এই ধরনের শিবির স্কুলের নীতির পরিপন্থী।

প্রভোস্ট ডেভিড কোটজ নীতিমালার কথা উল্লেখ করে ক্যাম্পাস গোষ্ঠীকে এক চিঠিতে বলেন, প্রতিষ্ঠান “মতপার্থক্য নিয়ে আলাপ-আলোচনায় গভীরভাবে দায়বদ্ধ এবং কঠিন ও জটিল বিষয়ে কথোপকথনে বসতে রাজি ও ইচ্ছুক।”

ইসরায়েলের নিন্দা

ডালাসে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১৭ জনের গ্রেফতারির পর পুলিশ একটি ফিলিস্তিনিপন্থী শিবিরকে সরিয়ে দেয়।

নিউ ইয়র্কে ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার একটি বিক্ষোভ শিবিরকে সরানোর সময় কমপক্ষে ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের মর্যাদা নিয়ে এক বৈঠকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের নিন্দা করেছেন।

জিলাদ এর্দান বলেন, “আমরা সব সময় জানতাম যে, হামাস স্কুলগুলিতে লুকিয়ে থাকে। আমরা বুঝিনি যে, শুধু গাজার স্কুলগুলিতে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড, কলম্বিয়া ও অনেক ‘অভিজাত’ বিশ্ববিদ্যালয়েও” লুকিয়ে থাকে।

ওয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারিন জন-পিয়ের বুধবার সংবাদদাতাদের বলেন, মানুষের “শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের অধিকার রয়েছে। তবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তা আইনের আওতাধীন ও শান্তিপূর্ণ” ততক্ষণ।

তিনি আরও বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করছি এবং ক্যাম্পাসে তারা যাতে নিরাপদ মনে করে তা নিশ্চিত করছি।”

XS
SM
MD
LG