অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজা যুদ্ধের ছয় মাস এবং ইসরাইলের ক্রম বিচ্ছিন্নতা


রাফার এক হাসপাতালের মর্গে আবু দ্রাজ পরিবারের লোকজন তাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য শোকপ্রকাশ করছেন। ইসরাইলের বোমাবর্ষণে তারা নিহত হন। ফটোঃ ৪ এপ্রিল, ২০২৪।
রাফার এক হাসপাতালের মর্গে আবু দ্রাজ পরিবারের লোকজন তাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য শোকপ্রকাশ করছেন। ইসরাইলের বোমাবর্ষণে তারা নিহত হন। ফটোঃ ৪ এপ্রিল, ২০২৪।

গাজার যুদ্ধ ছয় মাসে পড়লো। ইসরাইলি বিমান হামলায় সম্প্রতি কিছু ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ায় এই এলাকার ভয়ানক মানবিক সংকট ও এই সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সুস্পষ্ট পথের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সংঘাত ইসরাইলকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন করে তুলছে।

সোমবারের ঐ হামলায় ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাতজন কর্মী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন বিদেশী নাগরিক রয়েছেন। এই ঘটনা ইসরাইলের বহু ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশকেও ক্ষুব্ধ করেছে। পাশাপাশি এই লড়াই বন্ধের চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে, তাদের বাহিনী ভুলবশত এই হামলা চালিয়েছে এবং সাতজনের “অনভিপ্রেত” মৃত্যুর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ডের নাগরিক, যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার এক দ্বৈত নাগরিক ও এক ফিলিস্তিনি।

তবে, বিদেশে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এতে কমছে না। ব্রিটেন, জার্মানি বা অস্ট্রেলিয়ার মতো বন্ধু দেশে জনমত গাজায় ইসরাইলের অভিযানের বিরুদ্ধে ঘুরে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবরে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর ইসরাইল অভিযান শুরু করেছিল।

এই সংঘাত বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বয়ং নিজের সমর্থকদের থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, গাড়ির বহরের উপর হামলায় তিনি ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পর ওয়াইট হাউস দাবি করেছে, “বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দৃঢ় ও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ” নিতে হবে এবং আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলের কার্যকলাপের উপর নির্ভর করছে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহায়তা।

শুক্রবার, গাজার উত্তরাঞ্চলে ইরেজ ক্রসিং পুনরায় খুলে দেওয়ার এবং ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে আশদোদ বন্দর সাময়িক ও অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। পাশাপাশি, কের্মান শালোম ক্রসিং দিয়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যাতে আরও বেশি জর্ডানের ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ করতে পারে তার অনুমতি দিয়েছেন তিনি।

গাজা এখন ধ্বংসস্তুপ। ২৩ লক্ষ মানুষের অধিকাংশই নিজেদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এবং প্রাণধারণের জন্য ত্রাণসামগ্রীর উপর এখন তারা নির্ভরশীল। পবিত্র রমজান মাসে গোটা বিশ্বের মুসলিমরা যখন সূর্যাস্তের পর রোজা ভাঙতে রমজানের ঐতিহ্যবাহী ইফতার ও মিষ্টান্ন খাচ্ছেন তখন গাজার মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে দিনগুজরান করছেন।

৩৩ বছর বয়সী উম নাসের দাহমান বলেন, “রমজানের আগে আমাদের সামান্য আশা ছিল, কিন্তু রোজার মাস শুরু হওয়ার আগের রাতে সেই আশা উবে গেছে।” দাহমান এখন দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরে এক তাঁবুতে পাঁচজনের পরিবার নিয়ে থাকেন। গাজার জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি এখন রাফাতে আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, “যুদ্ধের আগে আমাদের অবস্থা অনেক ভাল ছিল, কিন্তু এখন আমরা ও আমাদের আত্মীয়রা সীমিত ত্রাণসামগ্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি।”

হামাসকে ধ্বংস করা ও গাজায় এখনও আটক ১৩৪ জন জিম্মিকে বাড়ি ফেরানোর লক্ষ্যে ইসরাইলের জনগণের বড় অংশ এই যুদ্ধকে সমর্থন করে চলেছে। তবে, নেতানিয়াহু স্বয়ং ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ-আন্দোলনের মুখে পড়েছেন। সে দেশে নতুন নির্বাচনের দাবি উঠছে। জনমত ইঙ্গিত দিচ্ছে, নির্বাচন হলে নেতানিয়াহু ভীষণভাবে পরাস্ত হবেন।

জেরুজালেমের ৭৩ বছর বয়সী লেখক ও স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠাতা ওয়েন্ডি ক্যারল বলেন, “আমি জোরালোভাবে মনে করি, ইসরাইলের বাইরে থেকে যারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন তারা এখানকার পরিস্থিতি জানেন না।”

তিনি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করি না। এই দেশে তিনি একটি বিভাজনমূলক শক্তি এবং বহু, বহু মানুষ এমনটা মনে করেন।”

এদিকে, গাজার উম নাসের দাহমান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি সবকিছুর একটা শেষ আছে। এই যুদ্ধ একদিন শেষ হবে। কিন্তু কবে?”

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

XS
SM
MD
LG