অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ?


ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতারা নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদিকে তাদের নেতা নির্বাচিত করার সমর্থনে হাত তুলেছেন। ২৫ মে, ২০১৯।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতারা নয়াদিল্লিতে নরেন্দ্র মোদিকে তাদের নেতা নির্বাচিত করার সমর্থনে হাত তুলেছেন। ২৫ মে, ২০১৯।

ভারতের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

১৪০ কোটির বেশি জনসংখ্যা এবং প্রায় ৯৭ কোটি ভোটারের দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি একজন কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী।

মোদির অধীনে ভারত একটি উদীয়মান বৈশ্বিক শক্তি। তবে তার শাসনামলে দেখা গেছে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণ এবং ভিন্নমত ও মুক্ত গণমাধ্যমের স্থান সংকোচন।

ছয় সপ্তাহব্যাপী সাধারণ নির্বাচন শুরু হবে ১৯ এপ্রিল। ফলাফল ঘোষণা হবে ৪ জুন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি ভোটার পাঁচ বছরের জন্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচিত করবেন।

সাত দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং ১০ লাখের বেশি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতি দফায় একদিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন একাধিক রাজ্যের বেশ কয়েকটি আসনে ভোট হবে। এর ফলে সহিংসতা ঠেকাতে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটিং মেশিন পরিবহনে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করতে পারবে সরকার।

মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী পার্লামেন্টের দুটি বৃহত্তম অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন। আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক দল বিরোধী ব্লকের অংশ।

নির্বাচনে মোদির টানা তৃতীয়বারের মতো জয় ঠেকাতে ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স নামে একটি ফ্রন্টের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

নির্বাচনে বড় ইস্যুগুলো কি কি?

মূলত অবাধ নির্বাচন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সমৃদ্ধ গণমাধ্যম, শক্তিশালী বিরোধী দল এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কারণে দশকের পর দশক ধরে ভারত তার গণতান্ত্রিক বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে।

মোদির ১০ বছরের শাসনামলে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কয়েকটি ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। এই নির্বাচনগুলোকে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অনেক পর্যবেক্ষক এখন ভারতকে একটি “হাইব্রিড রেজিম” বলে অভিহিত করেন যা পূর্ণ গণতন্ত্র বা পূর্ণ স্বৈরতন্ত্র নয়।

এই নির্বাচনে নেতা মোদির সীমারেখাও পরীক্ষা করা হবে। মোদির উত্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর হামলা বাড়ছে। সমালোচকরা তার বিরুদ্ধে 'হিন্দু ফার্স্ট' প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার শেকড়কে বিপন্ন করার অভিযোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মিরাট, ৩১ মার্চ, ২০২৪।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মিরাট, ৩১ মার্চ, ২০২৪।

মোদির শাসনামলে ভারতের গণমাধ্যম, যাকে একসময় প্রাণবন্ত এবং অনেকাংশে স্বাধীন বলে মনে করা হতো, তা এখন আরও কোণঠাসা হয়ে উঠেছে, সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। আদালতগুলো মূলত মোদির ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলায় মোদি সরকারের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে।

নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ভারতের ফেডারেল শাসনব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, এবং ফেডারেল এজেন্সিগুলো দুর্নীতির মামলায় শীর্ষ বিরোধী নেতাদের চাপে রেখেছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারতের বিশাল অর্থনীতি, যা বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিগুলোর অন্যতম। এটি ভারতকে বৈশ্বিক শক্তি এবং চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে সহায়তা করেছে। কিন্তু কিছু পদক্ষেপে ভারতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও মোদি সরকার তরুণ ভারতীয়দের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে। এর পরিবর্তে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তারা বিনামূল্যে খাদ্য ও আবাসনের মতো কল্যাণমূলক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করছে।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের যেসব দেশে ধনী আর গরিবের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি, ভারত তার মধ্যে একটি।

আশা করা হচ্ছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ভোটাররা আরেকবার সুযোগ পাবেন দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, সেটা নির্ধারণ করার।

XS
SM
MD
LG