অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' স্ক্যামাররা মানুষের সঞ্চিত অর্থ চুরি করছে


ভারতীয়রা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। নয়াদিল্লি, ভারত। ফাইল ফটোঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।
ভারতীয়রা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। নয়াদিল্লি, ভারত। ফাইল ফটোঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫।

ভারতে অবসরপ্রাপ্ত এক অধ্যাপক কামতা প্রসাদ সিং বাড়িতে বসেই পাঁচ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ পরিচয় দেওয়া অনলাইন জালিয়াতদের হাতে তুলে দেন তার কষ্টার্জিত সঞ্চয়।

“ডিজিটাল অ্যারেস্ট” নামে পরিচিত এই সাইবার অপরাধ এত বেড়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সতর্কতা জারি করেছেন। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে জালিয়াতরা অনলাইনে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাঠাতে মানুষকে নির্দেশ দেয়।

সিং এএফপি-কে বলেছেন, এই অর্থ ছিল তার সারা জীবনের সঞ্চয়।

৬২ বছর বয়সী এই ব্যক্তির কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে। তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে আমি বাইরে চা খাইনি, সরকারি যানবাহনের খরচ বাঁচাতে হেঁটে চলাফেরা করেছি।”

তিনি বলেন, “শুধু আমিই জানি কীভাবে অর্থ সঞ্চয় করেছি।”

ভারতে তথ্য ডিজিটাইজ করার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি যে জোর দেওয়া হয়েছে তা বিপজ্জনক ও দুর্ঘটনাপ্রবণ; অনলাইন ব্যাঙ্কিং-এ ব্যক্তিগত তথ্যদান থেকে প্রাথমিক ইন্টারনেট নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি—এই বিশাল ব্যবধানকে কাজে লাগাচ্ছে জালিয়াতরা, এমনটাই বলছে পুলিশ।

তথ্য জোগাড় করতে জালিয়াতরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে; তাদের হাতে যারা শিকার হয়েছেন তারা বিশ্বাস করেন, তাদের তথ্য কেবলমাত্র সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছেই সুরক্ষিত রয়েছে, অথচ জালিয়াতরা সেই তথ্যকেই লক্ষ্যবস্তু করছে এবং এমন অসম্ভব দাবি করছে যা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতে পারে।

অক্টোবর মাসে এক রেডিও সম্প্রচারে মোদি বলেছিলেন, ভারতীয়রা “নিছক ভয়ে” তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে ফেলছেন; তিনি আরও যোগ করেন, জালিয়াতরা “ক্ষতিগ্রস্তদের উপর প্রবল মানসিক চাপ তৈরি করছে।”

মোবাইল ফোন, বিশেষ করে ভিডিও কলিং-এর ফলে জালিয়াতরা সরাসরি মানুষের অন্দরমহলে পৌঁছে যাচ্ছে।

“আধার” নামে পরিচিত বিশ্বের বৃহত্তম বায়োমেট্রিক ডিজিটাল পরিচয় কর্মসূচি চলে ভারতে; এটি একটি ইউনিক কার্ড যা ভারতের একশো কোটির বেশি মানুষকে দেওয়া হয়েছে এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এই কার্ডের প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে।

জালিয়াতরা প্রায়শই তাদের নিশানায় থাকা ব্যক্তির আধার নম্বর উল্লেখ করে (যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়) দাবি করে, তারা পুলিশের লোক এবং সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে তারা তদন্ত করছে।

নগদ অর্থ চুরির আগে তারা তাদের শিকারদের অ্যাকাউন্টকে বৈধতা দেওয়ার নাম করে “সাময়িক” ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের অনুরোধ করে।

প্রায় অর্ধ দশক ধরে সাইবার অপরাধ নিয়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা সুশীল কুমার বলেন, অনলাইন জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগের কারণ “তারা যেভাবে কাজ করে তা দেখে ও শুনে সন্দেহ হওয়া কঠিন।”

এই দুষ্কৃতিদের মধ্যে স্কুলছুট থেকে উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা রয়েছে।

কুমার আরও বলেন, “সরকারি সংস্থাগুলি কীভাবে কাজ করে তার সাধারণ তথ্য জানতে ইন্টারনেটে কী খুঁজতে হবে তা তারা জানে।,

সর্বশেষ সরকারি তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ভারতে ১৭,৪৭০টি সাইবার অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে যার মধ্যে ৬,৪৯১টি অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা।

XS
SM
MD
LG