ভারত ইউরোপের চারটি দেশের সঙ্গে অবাধ ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য হল, আগামী ১৫ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আনা।
ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে রবিবার এই চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ইউরোপের এই গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলি হল সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও লিখটেনস্টাইন। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। আসন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভোট-প্রচারের বড় হাতিয়ার হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। মোদি তৃতীয়বার ক্ষমতায় যাবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলেছেন।
নয়াদিল্লি যতগুলি বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করেছে, তার মধ্যে এটি একটি, কারণ ভারত তাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিচ্ছে এবং পশ্চিমের বহু দেশ চীনের উপর থেকে বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে সচেষ্ট হওয়ায় সেই ভূ-রাজনৈতিক রদবদলের সুযোগ নিতে চাইছে ভারত।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের বোঝাপড়া ও সমঝোতার পর এই চুক্তি সম্পন্ন হলো। নয়াদিল্লির কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাণিজ্য বিশ্লেষক বিশ্বজিৎ ধরের মতে, “এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উন্নত দেশগুলির সঙ্গে ভারতের এটাই প্রথম চুক্তি।”
১৪০ কোটি জনগণের বিশাল বাজারের সুবিধা নেওয়ার পথকে সুগম করতে ভারত বিভিন্ন পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক কমাবে। এর মধ্যে রয়েছে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আমদানিযোগ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয় ও সুইজ ঘড়ির মতো জিনিস। নয়াদিল্লি তথ্য-প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক পরিষেবার মতো নানা ক্ষেত্রে তাদের রপ্তানি বাড়ানোর আশা দেখছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও চীনের পর ভারত হল ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পঞ্চম-বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২২-২৩ সালে এদের মধ্যে ১৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয়েছে।
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপের এই চারটি দেশের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
গোয়েল আরও বলেন, “এই প্রথম ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করছি আমরা।”
ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি উভয় পক্ষের জন্য এক “ভারসাম্যপূর্ণ” চুক্তির পথ প্রশস্ত করেছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত সুইজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেলেনে বাডলিগার আর্তিয়েদা বলেন, “আপনারা যদি বিভিন্ন বাজারের আয়তনের দিকে নজর দেন, তাহলে দেখবেন, ভারত ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বাজার দিচ্ছে। সেই সঙ্গে ভারত বিশ্বায়িত পৃথিবীর একটি দরজা।”