বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শনিবার ২৭ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সম্ভবত ইস্তফা দিতে চলেছেন। তিনি লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সঙ্গে সরকার ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।
সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে রবিবার ২৮ জানুয়ারি বিজেপির সঙ্গে জোট সরকার তৈরি করে তার পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার।
বিহারের রাজ্য রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে চলেছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে। বিহারে মহাগঠবন্ধন সরকার তৈরি হয় ২০২২ সালে যখন নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএ থেকে বেরিয়ে আসে।
মহাগঠবন্ধন সরকার তৈরি হয় নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড, লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, কংগ্রেস ও বাম দলগুলি জোটবদ্ধ হয়ে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিজেপির সুশীল মোদীকে সরিয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করেন লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদবকে।
বিজেপির সঙ্গে জোট সরকার তৈরির সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার পর সুশীল মোদী শুক্রবার বলেন, "রাজনীতিতে চিরস্থায়ী ভাবে দরজা কখনও বন্ধ হয় না। কারণ, রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা।"
জেডিইউ-আরজেডি টানাপোড়েন
২০২২ সালে নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময়ে অভিযোগ করেন, বিজেপি তার দলকে গ্রাস করতে চাইছে। বর্তমানে জেডিইউর দলীয় সূত্রে খবর, নীতীশ মনে করছেন, লোকসভা ভোটে আরজেডির সঙ্গে জোট হলে লালুপ্রসাদ যাদব সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। সেই ক্ষেত্রে তুলনায় বিজেপি নিরাপদ। মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশ কুমারের রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
নীতীশ কুমার বা জেডিইউ-এর তরফ থেকে এখনও বিজেপির সঙ্গে জোট সরকার গঠনের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনও করা হয়নি। শুক্রবার ২৬ জানুয়ারি নীতীশ কুমার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন।
এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশকে রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ অবস্থান স্পষ্ট করে জানানোর বার্তা দিল লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। কী করবেন নীতীশ কুমার, সরাসরি তা জানাতে হবে তাকে, এমনটাই বলছেন তারা।
আরজেডি-র সর্বভারতীয় সভাপতি শিবানন্দ তেওয়ারি বলেছেন, "বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারি নীতীশ কুমারের কাছে দেখা করার জন্য সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি।" শিবানন্দ জানান, তারা ভেবেছিলেন "নীতীশ কুমার আবারও একই ভুল হয়তো করবেন না। কিন্তু এখন সবকিছু যেন পরিস্কার হয়ে গেছে।" আরজেডি-র পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, "নীতীশ কুমার হয়তো বিশ্ব রেকর্ড করতে চাইছেন বারবার শিবির বদল করে।" "কিন্তু কতবার তিনি তা করবেন? কবে থামবেন?" প্রশ্ন করেছেন শিবানন্দ।
বিহার রাজনীতির স্তম্ভ দুই সমাজবাদী নেতা নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদবের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যায়।
দেশে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক দল আরজেডি ও জেডিইউ। নীতীশ কুমার জোটের অন্যতম আহবায়ক ছিলেন। অন্যদিকে কংগেস ও রাহুল গান্ধীর সঙ্গে আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদবের সম্পর্ক ভালো। জেডেইউ-এর তরফে আশা করা হয়েছিল নীতীশ কুমারকে ইন্ডিয়া জোটের সভাপতির পদ দেওয়া হবে। কিন্তু সেই পদে মনোনীত হন কংংগ্রস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।
এরপর থেকেই জোট ও জোটের শরিক দল, বিশেষত রাজ্যে আরজেডি-র সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে জেডিইউ ও নীতীশ কুমারের। মহাগঠবন্ধন ভেঙে এবার বিজেপির সঙ্গে জেডিইউ জোট বাঁধলে লোকসভা নির্বাচনের আগে সামগ্রিকভাবে সমস্যা বাড়বে ইন্ডিয়া জোটের।
বৃহস্পতিবার লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা রোহিনী আচার্যের এক্স হ্যান্ডেল (পূর্ববর্তী ট্যুইটার)-এ করা একাধিক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। সেই পোস্টগুলিতে নাম না করে তিনি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে 'সুবিধাবাদী', 'পাল্টিবাজ' বলে আক্রমণ করেন।
নীতীশ কুমারকে পরোক্ষে আক্রমণ করে রোহিনীর করা পোস্টের বিরুদ্ধে প্রথম মুখ খোলে বিহার বিজেপি। অন্যদিকে, বুধবার ২৪ জানুয়ারি নীতীশ কুমার পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হয়ে মন্তব্য করেছিলেন।
জোটের অঙ্ক
বিহার বিধানসভায় ২৪৩ জন সদস্য। সেখানে আরজেডি সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদের বিধায়ক সংখ্যা ৭৯। জেডিইউ-এর বিধায়ক সংখ্যা ৪৫। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৮। মহাগঠবন্ধন-এর মোট বিধায়ক সংখ্যা ১৫৯।
যদি জেডিইউ ও বিজেপি জোট বাঁধে তাহলে মোট বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়াবে ১২৩। বিহার বিধানসভার অন্য রাজনৈতিক দল হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা গত বছরই বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধায়, জেডিইউ-এর বিজেপির সঙ্গে জোট তৈরি করা সহজ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আরজেডি যদি বাম দলগুলির সঙ্গে জোট বেঁধে সরকারে অংশীদারিত্ব চায়, তাহলে সেই জোটের বিধায়ক সংখ্যা কম থাকবে ৮ জনের।