ভারতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের দুই শরিক দল আম আদমি পার্টি (আপ) ও তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়ে দিল তারা যথাক্রমে পাঞ্জাবে ও পশ্চিমবঙ্গে অপর শরিক দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধবে না। দুই দলের সুপ্রিমো তথা দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেছেন।
পাঞ্জাবে আপ লড়বে একা
লোকসভা নির্বাচনে পাঞ্জাবে একা লড়ার ঘোষণা করল আপ। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান জানিয়ে দিলেন, সেরাজ্যে একাই লড়বে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম কোনও জোটের প্রশ্ন নেই।
পাঞ্জাবে ১৩ টি লোকসভা আসনেই তারা প্রার্থী দেবে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান জানিয়েছেন, রাজ্যের সবকটি লোকসভা আসনের জন্য ৪০ জন প্রার্থীর নাম ইতিমধ্যেই বাছাই করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করা হবে।
আপ-শাসিত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান জানিয়ে দেন, পাঞ্জাবের ১৩ লোকসভা আসনের ১৩টিতেই জিতবে আপ। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আম আদমি পার্টি ৪০ জন প্রার্থীর নাম বাছাই করেছে। এখানের ১৩টি লোকসভা আসনের জন্য। আমরা এখানে একটা সমীক্ষা করব প্রার্থী করার আগে। কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট হবে না।”
লোকসভা নির্বাচনের আগে দিল্লি, গুজরাট, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গোয়ায় আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে। পাঞ্জাব বাদে বাকি চার রাজ্যে আসন রফা প্রায় চূড়ান্ত। দিল্লিতে কংগ্রেসকে ৩টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে আপ। তার পরিবর্তে তারা হরিয়াণায় ৩টি, একটি গোয়ায় এবং দুটি আসন গুজরাটে দাবি করেছে। এই বিষয়ে দুই দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।
পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল চলবে একা
লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আসন রফা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। বুধবার ২৪ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তিনি একা লড়বেন, রাজ্যে তিনি 'একলা চলো' নীতি নিচ্ছেন
কংগ্রেসের সঙ্গে কোনওরকম জোট হচ্ছে না।
রাহুল গান্ধী তার ভারত ন্যায় যাত্রা নিয়ে বৃহস্পতিবার ২৫ জানুয়ারি কোচবিহার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছেন। রাহুল গান্ধীর নাম না করে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “বাংলায় যে আসছেন, ইন্ডিয়ার জোট সঙ্গী হিসাবে কি আমাদের জানিয়েছেন যে দিদি আপনার রাজ্যে যাচ্ছি? আমাদের কিছু জানানো হয়নি।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এই বিষয়ে বলেছেন, “রাহুল গান্ধী যাত্রা করছেন। উনি কাকে নেমন্তন্ন করবেন, সেটা আমার সাবজেক্টের মধ্যেই পড়ে না। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আসন সমঝোতার ব্যাপারেও কিছু বলতে পারব না। কারণ এ ব্যাপারে যা কথা বলার তা হাইকম্যান্ডই বলছিল বলে জানি।"
ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে রাহুল গান্ধী এখন অসমে। সেখানে মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লোকসভা ভোটে তিনি পশ্চিমবঙ্গের জোট নিয়ে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার দলের ও তার সম্পর্ক ভাল। তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। তার নিষ্পত্তি হবে।
রাহুল গান্ধী বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল। ওনার দলের সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল। তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। তার নিষ্পত্তি হবে। তা নিয়ে এখানে কোনও মন্তব্য করব না। এর মধ্যে আমাদের কেউ কেউ বা ওদের কেউ যদি কিছু বলেন, তার কোনও প্রভাব আলোচনায় পড়বে না।"
বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতার কথা খণ্ডন করে বলেন, “সংবাদমাধ্যমে ভুলভাল লেখা হচ্ছে। ভুল কথা। কারও সঙ্গে কোনও আলোচনা হচ্ছে না।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আরও বলেন, “জোটের ব্যাপারে আমি প্রথম দিন যা প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা ওরা প্রত্যাখ্যান করেছে। তখনই আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বাংলায় আমরা একা লড়ব।" মমতার কথায়, “ওরা (কংগ্রেস) ৩০০ আসনে লড়ুন। বাকি আসনে আঞ্চলিক দলগুলির ব্যাপারে যেন হস্তক্ষেপ না করে।"
কংগ্রেসের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতার প্রশ্নে মমতা শুরু থেকেই বলছেন, তারা রাজ্যে দুটোর বেশি আসন ছাড়বেন না। সেই দু'টি আসন হল বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ। এই দু'টি আসন ইতিমধ্যে কংগ্রেসের দখলেই রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ কী এবং তৃণমূল কংগ্রেস জোটে থাকবে না, সেই প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন, “আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দল। সর্বভারতীয় স্তরে আমরা কী করব না করব তা ভোটের পর ভাবব। কিন্তু এখন কোনও চর্চা নেই। ভুল কথা।"
রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে পশ্চিমবঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও অন্য কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, জোট সম্মানজনক শর্তে হোক। কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গে কম করে ৬ থেকে ৮টি আসন ছাড়তে হবে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি দলীয় বৈঠকে মমতা বলেছেন, "কংগ্রেস আটটা, দশটা, বারোটা আসন চাইছে। এভাবে জোট হবে না। বাংলায় সব আসনে লড়াই করার প্রস্তুতি নিন।"