পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি অজয় গুপ্ত মন্তব্য করেছেন, গৃহবধূদের বেকার বলা যাবে না। তাদের দিনরাত কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতে হবে।
এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রসঙ্গ দিয়েছেন উদাহরণ হিসাবে। সেই রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, গৃহস্থালির কাজের জন্য গৃহবধূদের প্রত্যেক দিন ১০০ টাকা করে ধার্য করতে হবে।
আদালত মনে করে, ঘরের কাজের জন্য গৃহবধূদেরও পারিশ্রমিক রয়েছে। ঠিক কত টাকা বেতন পেতে পারেন একজন গৃহবধূ, তাও জানিয়ে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি অজয় গুপ্ত যে মামলার শুনানিতে এই মন্তব্য করেছেন, সেটি হল - ২০০৬ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বাসিন্দা লুফতা বেগম। পরে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরই ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন মৃতার ছেলে মীর শামিম।
লুফতা বেগমের ছেলের অভিযোগ ছিল, যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না তারা। সেইসময় ৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন মীর। যদিও সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা সেই টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। নিম্ন আদালত মীরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন লুফতা বেগমের ছেলে মীর শামিম।
বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর বিচারপতি অজয় গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে উঠে আসে গৃহবধূদের উপার্জন প্রসঙ্গ।
বিমা সংস্থার তরফে সওয়াল করার সময় তাদের আইনজীবী বলেন যে, মৃতা গৃহবধূ ছিলেন। তার কোনও উপার্জন ছিল না। তাই এত টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে কেন?
সেখানেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, "কে বলেছে গৃহবধূরা বেকার? সংসারে তাদের অনেক অবদান আছে।" বিচারপতি আরও বলেন, "গৃহবধূরা সারা বছর, দিনরাত কাজ করেন। তাদের কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাতে হলে তাকে নির্দিষ্ট বেতন দিতে হত। তাই সংসারের কাজ করার জন্য গৃহবধূদের আর্থিক মূল্য রয়েছে। তাঁদের কখনওই বেকার বলা চলে না।"
এই শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, মৃতা লুফতা বেগমের পরিবারকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বিমা সংস্থাকে।