অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

খালিস্তানঃ ভারতের শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন এখন কোথায় দাঁড়িয়ে?


ফাইল ছবি - শিখ বিক্ষোভকারিরা লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ করছে। ২২ মার্চ ২০২৩।
ফাইল ছবি - শিখ বিক্ষোভকারিরা লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে বিক্ষোভ করছে। ২২ মার্চ ২০২৩।

যুক্তরাষ্ট্র একজন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে এমন এক ঘটনায়, যেখানে আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন যে, অজ্ঞাতনামা এক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।

জুন মাসে ইউরোপে আটক এক ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে গত বুধবার অভিযোগ দায়ের করা হয়।

এর দুই মাস আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ভ্যাংকুভারের কাছে এক শিখ আন্দোলন কর্মীর হত্যাকাণ্ডের সাথে ভারত জড়িত থাকতে পারে, এমন বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারতের সাথে বড় ধরণের অংশীদ্বারিত্ব চাইছেন, সে সময় এই অভিযোগ অত্যন্ত স্পর্শকাতর সন্দেহ নেই।

শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন বা খালিস্তান আন্দোলন নিষিদ্ধ করেছে ভারত। তারা কানাডায় ঐ হত্যাকাণ্ডে কোনো ভূমিকা অস্বীকার করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ভারত যাচাই করছে এবং ঐ অভিযোগকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে।

খালিস্তান আন্দোলন কী?

সত্তর এবং ৮০-র দশকে ভারতে শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নেয়। শিখ অধ্যুষিত উত্তরের পাঞ্জাব রাজ্যে মূল আন্দোলন গড়ে ওঠে। ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ১.৭ শতাংশ শিখ।

এক দশকের বেশি সময় ধরে ঐ বিদ্রোহ চলে। ভারত সরকার ঐ আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করে যাতে কিছু শিখ নেতাসহ হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।

ভারতের সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে অমৃতসরে শিখদের কাছে ধর্মীয়ভাবে সবচেয়ে পবিত্র স্বর্ণ মন্দিরে জোরপূর্বক ঢুকে পড়ে। ঐ অভিযানে সরকারি হিসাব মতে প্রায় ৪০০জন নিহত হয়। শিখ গোষ্ঠিগুলোর হিসাব মতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন শিখ জঙ্গী নেতা জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে, যাকে ভারত সরকার ঐ সশস্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার জন্য দায়ী করে।

এরপর স্বর্ণ মন্দিরে সেনা অভিযানের আদেশদানকারি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮৪ সালে ৩১ অক্টোবর তার দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন।

তার মৃত্যুর পর উত্তর ভারতে বিশেষ করে দিল্লীতে শিখ বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয় যাতে হিন্দুরা বহু শিখকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

খালিস্তান আন্দোলন কি এখনও সক্রিয়?

পাঞ্জাবে সক্রিয়ভাবে এখন কোনো বিদ্রোহ নেই। তবে ভারতের ঐ রাজ্যে এবং প্রবাসে বসবাসকারি শিখদের মধ্যে খালিস্তান আন্দোলনের কিছু সমর্থক আছে।

ভারত সরকার গত কয়েক বছর বারবার সতর্ক করে বলেছে যে, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আবার সক্রিয় হবার চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার শিখ স্বাধীনতা আন্দোলনের কিছু নেতাকে গ্রেফতার করেছে।

বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে দিল্লীতে কৃষকদের যে ধর্মঘট হয়, তাতে অংশ নেয়া শিখদের ভারত সরকার "খালিস্তানি" বলে হেয় করার চেষ্টা চালায়। পরে চাপের মুখে সরকার ঐ আইন বাতিল করে।

বছরের শুরুর দিকে ভারতের পুলিশ শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী এক নেতা অমরিতপাল সিং-কে গ্রেফতার করে।

ভারতের বাইরে খালিস্তান আন্দোলন কতটা শক্তিশালী?

ভারত প্রবাসে শিখ সক্রিয় কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবার জন্য কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছে। মোদি নিজেই ঐসব দেশের নেতাদের কাছে এই বক্তব্য রেখেছেন।

শিখ বিক্ষোভকারিরা বছরের শুরুর দিকে লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনে ভারতের পতাকা ছিঁড়ে ফেলে এবং অমরিতপালের গ্রেফতারের নিন্দা জানায়। সানফ্রান্সিসকো-তে ভারতের কনস্যুলেটে বিক্ষোভকারিরা ভাংচুর করে এবং দূতাবাস কর্মীদের সাথে হাতাহাতি করে।

ভারত সরকার ঐসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।

ভারত সরকার কানাডায় হিন্দু মন্দিরে ভারতবিরোধী গ্রাফিটি লেখার জন্য এবং অটোয়ায় ভারতীয় হাই কমিশনে হামলার জন্য খালিস্তান সমর্থকদের দায়ী করে।

গত বছর শিখ জঙ্গী নেতা এবং খালিস্তান কমান্ডো ফোর্সের নেতা পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার পাকিস্তানে গুলিতে নিহত হন।

XS
SM
MD
LG