ভারতের উত্তর-পূর্বের মণিপুরের রাজধানী শহর ইম্ফলের জওহরলাল নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস নামে ভারত সরকারের একটি হাসপাতাল, যা মণিপুরের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি চিকিৎসা কেন্দ্র, সেখানে স্থানীয় মানুষেরা হামলা চালালেন। বৃহস্পতিবার ২৩ নভেম্বর ভারতীয় সময় রাতে কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালটি ঘিরে ফেলেন। গেটের বাইরে আটকে পড়ে হাসপাতালে আসা অ্যাম্বুলেন্স, আটকে পড়েন রোগীর পরিজন, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে, টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, পুলিশ এক কুকি জঙ্গিকে সেখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে। মেইতেইরা দাবি করে সেখানে কুকি জঙ্গির চিকিৎসা করা যাবে না।
পুলিশ হাসপাতালটিতে মিয়ানমারের এক গুলিবিদ্ধ নাগরিককে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছিল। হাসপাতালে আনার কিছু পরেই তিনি মারা যান। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে সেনার গুলিতে ওই ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।
মিয়ানমারে গত দেড় মাস যাবৎ সেনার সঙ্গে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর যৌথ কমান্ডের লড়াই চলছে। দেশের ভেতর এই লড়াইতে হামলার শিকার মিয়ানমার সেনার বেশ কয়েকজন মণিপুরের পাশের রাজ্য মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন সাধারণ নাগরিকেরাও।
ইম্ফলের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা মিয়ানমারের ওই নাগরিক আহত অবস্থায় কোনওরকমে সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুরে ঢুকে পড়লে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাকে উদ্ধার করে। প্রথমে তাকে অসম রাইফেলসের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ ইম্ফলের ওই প্রথম সারির হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছিল। ভর্তির কিছু সময় পরই মারা যান তিনি। এই ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রতিবাদেই অশান্ত হয়ে ওঠে হাসাপাতাল চত্বর। বিঘ্ন ঘটে হাসপাতালের স্বাভাবিক কাজকর্মে।
ঘটনাচক্রে মিয়ানমারের ওই নাগরিকের সঙ্গে মণিপুরের কুকি-জো সম্প্রদায়ের জাতিগত মিল রয়েছে। এই কারণেই রটে যায়, আহত ব্যক্তি কুকি জঙ্গি। মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষেরা দাবি করেন, কুকি জঙ্গির চিকিৎসা করানো যাবে না ইম্ফলের হাসপাতালে। ইম্ফল উপত্যকা মূলত মেইতেইদের দখলে। সেখানে কুকিরা সংখ্যালঘু। ৩ মে জনজাতিদাঙ্গা শুরুর পর থেকে মেইতেইদের হামলার মুখে কুকিরা রাজধানী শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।